সর্দি আমাদের অতি পরিচিত একটি অসুখ। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার জীবনে কখনো সর্দি হয়নি। মানুষ যেসকল রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয় সর্দির ভাইরাস এর মধ্যে প্রথম। বয়স্ক মানুষ বছরে ২ থেকে ৩ বার এবং শিশু বছরে ৬ থেকে ১২ বার সর্দি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। শীতকাল আসলে এর প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পায়।
সর্দি ধরে পড়ে আছেন একজন রোগী |
লক্ষণ: গলাব্যথা, নাক বন্ধ থাকা, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর। ক্ষেত্র বিশেষে মাথা ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, রুচি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
স্থায়িত্বকাল সাত থেকে দশ দিন। ক্ষেত্র বিশেষে সবোর্চ্চ তিন সপ্তাহের মতও থাকতে পারে।
স্থায়িত্বকাল সাত থেকে দশ দিন। ক্ষেত্র বিশেষে সবোর্চ্চ তিন সপ্তাহের মতও থাকতে পারে।
AAAA-ChOOO |
যেভাবে সংক্রমণ হয়ঃ
২০০ এর ও বেশি ভাইরাস রয়েছে যা সর্দির মত সংক্রমণের জন্য দায়ী, এর মধ্যে অন্যতম হল রাইনোভাইরাস। ৫০% এর ও বেশি ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ এর জন্য রাইনোভাইরাসকেই দায়ী করা হয়। সর্দির এই ভাইরাস কণিকাগুলো দূষিত আঙ্গুল বা দূষিত বাতাস থেকে আমাদের নাকের ভিতর জমা হয়। অতি অল্প সংখ্যক ভাইরাস কণিকা (১-৩০) সংক্রমণের জন্য যথেষ্ঠ। এরপর ভাইরাস কণিকাগুলো নিজে নিজে নাকের ভিতরের adenoid নামক এলাকায় প্রবেশ করে।
ভাইরাস কণিকাগুলো অনুনাসিক কোষ পৃষ্ঠের উপর অবস্থিত রিসেপ্টর (ICAM 1) এর সাথে যুক্ত হয়। এই রিসেপ্টর ভাইরাস পৃষ্ঠের উপর ডকিং পোর্ট নামক অংশের সাথে মিশে যায়।
রিসেপ্টর এর সাথে যুক্ত হওয়ার পর ভাইরাস একটি কোষের মধ্যে সংক্রমণ হওয়া শুরু করে। এরপর সংক্রমিত কোষে নতুন ভাইরাস কণিকা উৎপাদন শুরু হয়। তখন সংক্রমিত কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে। এভাবে নতুন কোষে ভাইরাস সংক্রমন ঘটে এবং নতুন নতুন ভাইরাস কণিকা উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং এর ফলে আমরা সর্দিতে আক্রান্ত হই।
যেভাবে ছড়ায়ঃ
সর্দি ছোঁয়াচে। সর্দিতে আক্রান্ত কারো স্পর্শ, বা তার ব্যবহৃত জিনিস যদি জীবাণুমুক্ত না থাকে তাহলে সেটি ব্যবহারে সহজেই এটি আশেপাশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যায়। যেমন, জামাকাপড়, থালাবাসন, তোয়ালে, এমনকি ফোন কিংবা ল্যাপটপের কীবোর্ড। এমনকি সর্দি আক্রান্ত কেউ যদি কাশি বা হাচিতে রুমাল ব্যবহার না করে তাহলে সেই ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে যায়। তখন সেই বাতাসে কেউ নিঃশ্বাস নিয়েও এতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
সর্দি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ঃ
আমরা কিছু কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে অতি সহজে সর্দি থেকে রক্ষা পেতে পারি। এরমধ্যে কয়েকটি নিচে লিখা হলঃ
--> সর্দি কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরে অবস্থান করুন। কারণ কাশির জীবাণু খুব সহজেই আপনার চোখ অথবা নাকের ভেতর দিয়ে সংক্রমিত হতে পারে।
--> হাত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। কারণ হাঁচি বা কাঁশির সাথে নির্গত ঠাণ্ডার জীবাণু যে কোন বস্তুতে লেগে থাকতে পারে। স্পর্শের মাধ্যমে তা হতে সংক্রমণ হতে পারে।
--> পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করুন। যথেষ্ট পরিমাণে (কমপক্ষে দৈনিক আট গ্লাস) পানি গ্রহণ শরীর বিশুদ্ধ রাখে এবং দেহ থেকে জীবাণু নির্গমনে সাহায্য করে।
--> আঙ্গুল দিয়ে ঘন ঘন নাক অথবা চোখ খুটবেন না।
--> বিছানায় শুয়ে না থেকে হাঁটাহাঁটি বা মৃদু ব্যায়াম করুন।
--> রাতে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমান।
--> কম চর্বিযুক্ত চিকেন স্যুপ খান। কারণ গরম গরম চিকেন স্যুপ প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সরবরাহ করে দেহকে ঠাণ্ডা-সর্দির জীবানুর সাথে যুদ্ধে সাহায্য করে।
সর্দি হলে করণীয়ঃ
প্রাথমিক বা ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে যা করতে পারেনঃ
- কুসুম কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। এটি সর্দি গলা ব্যাথা সবকিছুতে আরামদায়ক একটা অনুভূতি দিবে আপনাকে।
- আদা চা খেতে পারেন ঘুমানোর আগে। এটা আপনার সর্দির সাথে কাশির ভাব অনেকটা কমিয়ে দিবে।
- চুলায় কিছুটা পানি গরম করে পানির ভাপ নিতে পারেন। এতে নাক বন্ধ ভাবটা কিছুটা কমে যাবে। নিঃশ্বাস নিতে কিছুটা আরাম লাগবে।
- কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এবং অবশ্যই গোসলের পর চুল যেনো ভালোভাবে শুকায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে আপনার শরীর যেমন পরিচ্ছন্ন থাকবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সর্দি ৩ থেকে ৭ দিনের মাঝেই সেরে যায়। তবুও এরপর কোনো সমস্যা বা ভালো অনুভব না করলে দ্রুত রেজিস্ট্যার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে ঔষধ গ্রহণ করুন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।