আমার এই লেখা তাদের জন্য যারা নিচের ৩টা প্রশ্ন নিয়ে অনেক চিন্তায় আছে- ( আমাকে নক করেছে অনেকেই ইনবক্সে)
১. সিজিপিএ কততুকু গুরুত্বপূর্ণ? কত লাগবেই?
২. একটা ভালো চাকরি পেতে কি কি স্কিল লাগে?
৩. এক্সট্রা- কারিকুলার এক্টিভিটির মধ্যে কোনটা বেশি কাজে দেয়? কোনটাতে সময় দেয়া উচিত?
একে একে আসি। সিজিপিএ আর সুন্দরী মেয়েদের পিছনে দৌড়ানো কিছুটা একই ধরনের। ধরতে ধরতে হাত থেকে পিছলে যায়। ফ্রম বিজনেস পয়েন্ট অফ ভিউ- এটা রিস্কি। নন বিজনেস পয়েন্ট অফ ভিউ থেকেও একটা একটা বলদ এপ্রোচ। তাইলে কি করা যায়?
বাংলাদেশে ন্যনুতম সিজিপিএ এর রেঞ্জ- ৩.৩ – ৩.০. মাল্টিন্যাশনাল গুলা বেশিরভাগ ৩.৩ চায়। ব্যঙ্ক চায় ৩, অনেকে ৩.৩ চায়। এনজিও চায় ৩.৩। সরকারি যা চায় তা সবারই থাকে ফেল না করলেসিজিপিএ এর গুরুত্বটা আসলে “প্রথম গেট” পার হওয়ার মত। তাই নুন্যতম সিজিপিএ টা লাগবেই। ওইটা না থাকলে প্রথম স্ক্রিনেই বাদ দিয়ে দিবে যদি না তোমার কোন শক্তিশালী “লিঙ্ক” না থাকে সেখানে বা আত্মীয়- স্বজন থাকে। আমার ছিল না, বেশিরভাগ মানুষের থাকে না।
তাই সিজিপিএ টার্গেট করা উচিত ৩.৫। এটা একটা শক্তিশালী সিজিপিএ। এর বেশি হলে সেটা বোনাস, না হলেও সমস্যা নাই।
এর পরেও কিছু ইস্যু থাকে। কিছু জব যেমন হার্ডকোর রিসার্চ ( CPD, World Bank, ADB etc.) এদের ডিমান্ড থাকে বেশি সিজিপিএ। যাদের এসব জায়গায় চাকরির ইচ্ছা তাদের ৩.৭ রেঞ্জে থাকতে হবে কমপক্ষে। এর চেয়ে বেশি যাদের তারা সাধারনত টিচার হয়। তো যাদের যেটা হওয়ার ইচ্ছা সেভাবেই এখন থেকে আগান। নাইলে পরে কান্নাকাটি করে লাভ হবে না।
প্রথম গেট পার হওয়া গেলো সিজিপিএ দিয়ে। এর পর এটার কথা আর আসবে না। এর পর দেখা হবে কোন বান্দার কি কি স্কিল আছে/ কি কি করেছে ভার্সিটিতে।
৩টা স্কিলের ( টেকনিক্যাল বাদে) অনেক দাম আছে জব মার্কেটে-
১. এনালিস্ট – কেস সলভ করতে পারে কিনা কম সময়ে, বাস্তব সম্মত সল্যুশন দিতে পারছে কিনা ইত্যাদি।
২. প্রেজেন্টেশন - কিভাবে কথা বলে, কাউন্টার লজিক দিতে পারে কিনা, ড্রেস মানিয়েছে কিনা পরিবেশের সাথে, বেশি বেশি বলে কিনা, ইংরেজি ভালো কিনা, কাপাকাপি করে কিনা ইত্যাদি
৩. মাইন্ডসেট- পজিটিভ ভাবে দেখে কিনা সমস্যাকে, চ্যালেঞ্জগুলা কিভাবে সমাধান করে- টিমওয়ার্ক নাকি ইন্ডিভিজুয়াল এপ্রোচে যায় ইত্যাদি
যারা একদমই প্রথমবারের মত ইন্টার্ভিউ দিতে যায় তাদের এই ৩ টার সব না থাকলেও একটা ব্যালান্সড স্কোর থাকা লাগবে। না হলে বাদ যদি সেটা মাল্টি- ন্যাশানাল হয়। এখানে বলে রাখা ভালো অনেক মাল্টি- ন্যাশানালেই অনেকেই আছে যারা লিঙ্ক দিয়ে ঢুকে বসে আছে কারন তারভালো সম্পর্ক আছে HR এর সাথে বা পরিচিত ভাইবোন আছে ওখানে চাকরি করে, বিশেসত ম্যক্সিমাম ইন্টার্নশিপ এভাবেই হয়, আমার সময় আমি সেটাই দেখতাম।
তাহলে প্রশ্ন আসে এই ৩টা স্কিল আনতে কি কি করা যায়-
১। ক্লাব একটা ভালো অপশন। কিন্তু ক্লাবে কি করা হচ্ছে সেটা দেখা লাগবে। যেমন যারা ভালো ওরগানাইযার তাদের দাম দেয়া হয় চাকরিতে কারন তাদের অনেক মানুষের সাথে আগে কথা বলতে হইছে, টীম চালাতে হইছে, ইভেন্ট ম্যানেজ করা লাগছে- এসব দরকারি স্কিল।
২. ডিবেট খুবই কাজের যাদের প্রেজেন্টেশনে সমস্যা আছে। ডিবেট শুধু ভালো প্রেজেন্টার বানায় না, লজিকাল আর্গুমেন্ট শিখানো হয় এখানে ফলে প্রেজেন্টার ৩৬০ এঙ্গেলে চিন্তা করতে শিখে। আমার সাজেশন থাকবে এখানে সময় দেয়া
৩. বিজনেস কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করা। হারুক- জিতুক সেটা মূল কথা না। অভিজ্ঞতাটা মূল কথা। অনেকের সাথে পরিচয় হয় এসব জায়গায় যেটা পরে কাজে দেয়।
৪.পার্ট- টাইম জবের অনেক দাম। কেউ যদি পড়াশুনার সাথে সাথে কোথাও পার্ট- টাইম জব করতে পারে সেটা সিভিকে অনেক ভারি করে, সাথে নিজের অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়। এটা হতে পারে কোন মাল্টি ন্যাশনাল কিংবা কোন স্টার্ট-আপ (কোচিং এর ক্লাস / প্রাইভেট প্রযোজ্য না)
সব মিলিয়ে, একটা বড় কোম্পানি তাকেই চাকরি দিবে যার সবগুলাতেই কিছু না কিছু দক্ষতা আছে। সিজিপিএ ৪ এর কোন দাম নেই যদি সে একটা ইন্টার্ভিউ সামাল দিতে না পারে। ঠিক একইভাবে একগাদা ভলান্টিয়ার এক্টিভিটির কোন দাম নাই যদি না তার সলিড কোন স্কিল না থাকে।
ভার্সিটির ৪ বছর অনেক মজার। এই মজার পাশাপাশি নিজেকেও গড়া লাগে। এর পর আর পিছনে ফিরার যে কোন সুযোগ নাই।
শেষ কথা, সাফল্যের পিছনে দৌড়ানো যাবে না। সাফল্য সবসময় আসবে না। ব্যর্থতা আসবে, সেটা মানাও শিখতে হবে। যে ব্যর্থতা মানতে পারে না সে বেশিদূর যেতে পারে না। সাফল্য তার কাছেই আসবে যে ব্যর্থ হয়েও উঠে দাঁড়াবে বারবার। আমার ডিবেট শিখতে ১ বছরের বেশি লাগছিল কিন্তু হাল ছেড়ে দেইনি। দেই নাই বলেই আজকের জায়গায় আমি।
সবার জন্য শুভ কামনা ...
Courtesy: Anirudha Jahangir
Associate Research Manager at Millward Brown Bangladesh.
Associate Research Manager at Millward Brown Bangladesh.