ফার্মার কালে ( সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে) গণিত চর্চা একটু অন্য রকম ছিল, ব্যাপারটাকে খুব সম্মানজনক বিষয় মনেকরা হত না।গণিতবিদরা গণিতের চর্চা নিয়ে যে ফলাফল পেতেন তা গোপন রাখার চেষ্টা করতেন। কেউ কারো সঙ্গে কথাবলতেন না।সেই সময় মার্জেন ( Mersenne ) নামক এক ধর্মযাজক ছিলেন গণিতে খুব উৎসাহী এবং তিনি খুবই আধুনিক একজন মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় গণিতবিদের সাথে সম্পর্ক রাখতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সবাই মিলে আলোচনা করে গণিত নিয়ে গবেষণা করলে গণিতের উন্নতি হবে আরো দ্রুত। মার্জেন এমন কোনো আহমরি গণিতবিদ ছিলেন না কিন্তু গণিতের জন্য ভালোবাসার কারণে গণিতে তার আবদান ছিল অনেক বড়।সেই সময় এই রকম উদার মনের একজন মানুষের এই রকম মুক্ত চিন্তার জন্য তার যন্ত্র না ও কম হয়নি - অনেকেই তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে ফেলেছিল। যে মানুষের সাথে তার কখনো সম্পর্কচ্ছেদ হয়নি, তিনি হচ্ছেন ফার্মা। মার্জেন সারা ফ্রান্স ঘুরেবেড়াতেন এবং নিয়মিত ভাবে ফার্মার সাথে যোগাযোগ রাখতেন।
মার্জেন ছাড়াও ফার্মার সার্বক্ষণিক সঙ্গি ছিলেন একটা বই, সেই প্রাচীন গ্রিসের ডায়োফেন্টাসের ( Diophantus) লেখা এরিথমেটিকা ( Arithmetica )। ফার্মা আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনো গণিত পড়েন নি, গণিত যা শিখেছেন তা ঐ বই থেকে শিখেছেন। এই বইতে ১০০ টা সমস্যা আর তার বিস্তারিত সমাধান ছিল,ফর্মা সেগুলো পড়তেন এবং তার মাঝে আরো গভীর গাণিতিক সমস্যা খুজে বেরকরে সেগুলো সমাধান করতেন মার্জেন সব সময় ফার্মাকে বলতেন গণিতে তার চিন্তা ভাবনা এবং ফলাফলের কথা সবাই কে জানাতে কিন্তু ফার্মা কোনো উৎসাহ দেখাতেন না। তথ্য প্রকাশ করে তার জন্য স্বীকৃতি বা সম্মসনের ব্যাপারে ফার্মার কোনো আগ্রহ দেখাতেন না। তিনি গণিতের একটা সমস্যা বেছে নিতেন, আপনমনে সেগুলোর সমাধান করে আরেকটি বেছে নিতেন। একেবারে..
কিছুই যে কাউকে বলতেন না সেটা অবশ্যয় পুরাপুরি সত্য নয়। মাঝে মাঝে অন্যদের যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য কিছু একটা প্রকাশ করতেন! হয়তো খুব চমৎকার কিছু একটা ভেবে বের করতেন সেটা তখন তার যে দু-চারজন গণিতবিদ বন্ধু আছে তাদের কাছে পাঠিয়ে বলতেন, আমি এই থিওরি টা বের করেছি দেখ দেখি তোমরা এটা প্রমাণ করতে পার কি না! অন্য গণিতবিদ রা সেই থিওরেনামটি দেখে তার সমাধানের জন্য মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতেন কিন্তু ফার্মা কখনোই তার উত্তর বলতেন না। অনেকে তাকে এই জন্য খুব অপছন্দ করেতেন - কেউ কেউ তাকে বলতেন অহংকারী, এমনকি কেউ বলত শয়তান! ফান্সের সাথে ইংল্যান্ডের সবসময় একধরণের প্রতিযোগিতা ছিল। তাই ফার্মা খুবই আনন্দ পেতেন যখন ইংল্যান্ডের কোনো গণিবিদকে এভাবে খানিকটা পিড়া দিতে পারতেন। ফার্মা যে কখনো কিছু প্রকাশ করতেন না তার একটি কারণ ছিল। কিছুএকটা প্রকাশ করতে চাইলে পুরো বিষয় টার খুঁটি নাটি লিখতে হয়, সেগুলো ফার্মার কাছে সময়ের অপচয় বলে মনে হতো। কোনো একটা সমস্যা নিয়ে যখন তিনি ভাবতেন তার সমাধান পেয়ে গেলে তিনি চট করে অন্য সমস্যায় চলে যেতেন -সমাধানের কোনো কিছু তিনি লিখতেন না! প্রকাশ করতে তার অনিচ্ছার আরেকটা কারণ ছিল, কোনো কিছু প্রকাশ হলে গণিতবিদ রা সেটা কাটাছেঁড়া করে, সেটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে । যুক্তিতর্ক দিয়ে আলোচনা করে, খুটিনাটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে, সেটাছিল ফার্মার খুব অপছন্দ । তিনি একে বারে আপন মনে নিজের খেয়ালে অঙ্ক করতেন, কখনো কেউ তাকে বিরক্ত করবে সেটা তিনি খেয়াল করতে পারতেন না। সেই সময়ের বড় গণিতবিদ প্যাস্কেল ও ( Blaisc pascal ) ফর্মাকে তার গবেষণা কাজ প্রকাশ করাতে চেষ্টা করেছেন কখনোই সফল হননিন।তবে প্যাস্কেলের সাথে চিঠি পত্রের যোগাযোগের কারণে অবশ্য প্রোব্যাবলি থিওরি নামে গণিতের একটা নতুন শাখা.
লিখেছে - নাজমুল হাসান