লিওনার্ড অয়লারের |
গণিত ভালবাসেন অথচ লিওনার্ড অয়লারের নাম শোনেননি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল ! তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত সুইস গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী। অয়লারকে ১৮শ শতকের সেরা গণিতবিদ ও সর্বকালের সেরা গণিতবিদদের একজন বলে মনে করা হয়। ১৭০৭ সালের আজকের দিনে তার জন্ম । অয়লার এর বাবা পল অয়লার ছিলেন রিফর্মড চার্চের একজন যাজক। মা ছিলেন মার্গারিট ব্রুকার, তিনিও ছিলেন একজন যাজকেরই মেয়ে। অয়লারের ছোট দুই বোন ছিল, আন্না মারিয়া এবং মারিয়া ম্যাগডালেনা। অয়লারের বয়স যখন এক বছর, তখন অয়লার পরিবার ব্যাসেল ছেড়ে রাইহেনে বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানেই শৈশব কাটান অয়লার। পল অয়লার ছিলেন বের্নুলি পরিবারের—ইয়োহান বের্নুলির পারিবারিক বন্ধু, যিনি সে সময়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ বিবেচিত ছিলেন। বের্নুলি তরুণ অয়লারের ওপর গভীর প্রভাব রাখেন। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অয়লারকে ব্যাসেলে তার মাতামহের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ব্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৭২৩ সালে তিনি দেকার্ত ও নিউটনের দার্শনিক ধারণাসমূহের তুলনামুলক বিশ্লেষণ করে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি ইয়োহান বের্নুলির কাছে প্রতি শনিবার বিকেলে পড়তে যেতেন, যিনি তার ছাত্রের অসাধারণ গাণিতিক প্রতিভা বুঝতে পারেন।তার পিতার ইচ্ছানুযায়ী ধর্মযাজক হবার লক্ষ্যে এ সময় তিনি ধর্মতত্ত্ব, গ্রীক ও হিব্রু নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, তবে বের্নুলি পল অয়লারকে বোঝান যে তার পুত্র শ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের সারিতে স্থান করে নেবার জন্যেই জন্মগ্রহণ করেছে। বেরনুলির সাহায্যে ১৭২৬ সালে অয়লার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ডি সোনো শিরোনামে শব্দ সঞ্চালনের ওপর পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করেন।
লিওনার্ড অয়লারের |
তিনি ক্যালকুলাস, সংখ্যাতত্ত্ব, অন্তরক সমীকরণ, গ্রাফ তত্ত্ব ও টপোলজিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। অয়লার e , পাই এর জন্য π , যোগের জন্য Σ চিহ্নের প্রবর্তন করেন। তিনি বলবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানেও অবদান রাখেন। সমসাময়িককালে তার মত প্রকাশনা সম্পন্ন কোনো গণিতবিদ ছিলেন না। এমনকি মুদ্রণ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার পরও তার সমপরিমাণ প্রকাশনা সম্পন্ন বিজ্ঞানীর সংখ্যা খুবই কম। গণিতবিদদের মধ্যে তার প্রকাশিত গবেষণা কাজের পরিমাণ আজও সর্বাধিক এবং এটি একটি গিনেস রেকর্ড।2002 Euler নামের গ্রহাণুটি তাঁর সম্মানে নামকরণ করা হয়। সুইস ১০-ফ্রা এর নোট এবং সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া ও জার্মানির অসংখ্য ডাকটিকেটে তার ছবি রয়েছে। তার বিশ্লেষোনধর্মী প্রমাণে সূচকীয় ফাংশন ও লগারিদমের ব্যাবহারের সূচনা দেখা যায়। তার নামানুসারে অয়লারের অভেদ তারই অন্যতম একটি সৃষ্টি।অয়লার অপটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি তার অপটিকস গ্রন্থে নিউটনের কণা তত্ত্বের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, যা ছিল সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত একটি তত্ত্ব। তার ১৭৪০ সালে উপস্থাপিত প্রবন্ধ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনের আলোর তরঙ্গ সংক্রান্ত মতবাদটি প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে, যা আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রচলনের পূর্ব পর্যন্ত প্রভাবশালী ছিল !
লিওনার্ড অয়লারের |
১৯৮৮ সালে ম্যাথমেটিকেল ইন্টেলিজেন্সারের পাঠকেরা সর্বকালের সেরা পাচঁটি সমীকরণ নির্বাচন করেছিলান ! যাদেড় তিনটিতেই অয়লারের অবদান ছিল। অয়লারের উপপাদ্য খ্যাঁত e^iπ + 1 = 0 পৃথিবীর সুন্দরতম সমীকরণ বলা হয় ! আমাদের প্রিয় তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান সমীকরণকে গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এই সমিকরনের e হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধ্রুব সংখ্যা । এর মান 2.718281…..আমি সংখাটিকে জাদুকরী সংখ্যা বলি ! e হল অমূলদ সংখ্যা ।যে বাস্তব সংখ্যাকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে প্রকাশ করা যায় না তাকে অমূলদ সংখ্যা বলে । সাধারণ লগারিদমের ভিত্তি হল e .হল কাল্পনিক একক যেখানে i^2= -1, π সম্পর্কে কি নতুন করে আর কিছু বলতে হবে ?
অয়লারের অভেদ অনুযায়ী,
e^iθ = cos θ + isin θ
এই অভেদটি পাওয়া যায় সহজেই e^x এর বিস্তৃতির মাধ্যমে, ( বিস্তৃতি করা হয়েছে টেলর সিরিজ এর মাধ্যমে)
আমরা জানি,
আমরা জানি,
e^x = 1 + x +(x)^2 /2! +(x)^3 /3! +(x)^4 /4! + (x)^5 /5! .......
(এখানে n!= n × (n-1) × (n-2) × ... 2×1, n ফ্যাক্টরিয়াল.
যেমন 5!= 5×4×3×2×1=120
মজার বিষয় হলো 0!=1, কেনো বলতে পারবেন? নিচে কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম)
(এখানে n!= n × (n-1) × (n-2) × ... 2×1, n ফ্যাক্টরিয়াল.
যেমন 5!= 5×4×3×2×1=120
মজার বিষয় হলো 0!=1, কেনো বলতে পারবেন? নিচে কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম)
আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কি করে এটা লেখা সম্ভব! আমার বা দিকে একটা রাশি, আর ডানদিকে একটা অসীম সিরিজ।
কিন্তুু দেখতে অদ্ভুত হলেও দুটো সমান।
গণিতের ভাষায় X=cY ( এখানে X , Y চল রাশি এবং c ধ্রুবক।) হলে X এবং Y কে পরস্পর নির্ভরশীল রাশি বলা হবে। নাহলে তারা স্বাধীন রাশি হবে।
এই হিসাব করে দেখলে, দেখবেন X এবং X² , X ³ .... X^n সকলেই স্বাধীন রাশি।
কার্টেসিয়ান কোঅর্ডিনেটর এ যেমন 3 টে স্বাধীন রাশি ( X, Y , Z ) দিয়ে সব বিন্দু নির্দেশ করা যায়।
তেমনি ডানদিকের ওই অসীম শ্রেণীও একটা কোঅর্ডিনেটর সিস্টেম বানায়, যার মাধ্যমে সমস্ত রাশি ( ফাংশন) কে অসীম শ্রেণীতে লেখা সম্ভব।
কিন্তুু দেখতে অদ্ভুত হলেও দুটো সমান।
গণিতের ভাষায় X=cY ( এখানে X , Y চল রাশি এবং c ধ্রুবক।) হলে X এবং Y কে পরস্পর নির্ভরশীল রাশি বলা হবে। নাহলে তারা স্বাধীন রাশি হবে।
এই হিসাব করে দেখলে, দেখবেন X এবং X² , X ³ .... X^n সকলেই স্বাধীন রাশি।
কার্টেসিয়ান কোঅর্ডিনেটর এ যেমন 3 টে স্বাধীন রাশি ( X, Y , Z ) দিয়ে সব বিন্দু নির্দেশ করা যায়।
তেমনি ডানদিকের ওই অসীম শ্রেণীও একটা কোঅর্ডিনেটর সিস্টেম বানায়, যার মাধ্যমে সমস্ত রাশি ( ফাংশন) কে অসীম শ্রেণীতে লেখা সম্ভব।
তাহলে, e^iθ = 1 + iθ +(iθ)^2/ 2! + (iθ)^3 /3! + (iθ)^4 /4! +(iθ)^5/ 5! +........
অতএব, e^iθ = 1 + iθ -(θ)^2/ 2! - i(θ)^3 /3! + (θ)^4 /4! +i(θ)^5/5! - (θ)^6 /6! ........
বা, e^iθ = { 1 -(θ)^2/ 2! + (θ)^4 /4! - (θ)^6 /6! + ....} + { iθ - i(θ)^3 /3! +i(θ)^5/ 5! -........}
(+) চিহ্নের ডান পাশের রাশি থেকে i কমন নিয়ে পাই,
e^iθ = { 1 -(θ)^2/2! + (θ)^4 /4! - (θ)^6 /6! + ....} + i{ θ - (θ)^3 /3! +(θ)^5/5! -........}.......(ক)
e^iθ = { 1 -(θ)^2/2! + (θ)^4 /4! - (θ)^6 /6! + ....} + i{ θ - (θ)^3 /3! +(θ)^5/5! -........}.......(ক)
আমরা জানি , sin θ এর বিস্তৃতি sin θ = θ - (θ)^3 /3! +(θ)^5/ 5! -.......
cos θ এর বিস্তৃতি cos θ = 1 -(θ)^2/ 2! + (θ)^4 /4! - (θ)^6 /6! + ....
cos θ এর বিস্তৃতি cos θ = 1 -(θ)^2/ 2! + (θ)^4 /4! - (θ)^6 /6! + ....
অতএব, (ক) নং সমীকরণ থেকে পাই ,
e^iθ = cos θ + isin θ
এবার আসি , দুনিয়ার সুন্দরতম সমীকরণ প্রতিপাদনে ,
ধরি , θ= π , আর, cos π = -1 , sin π = 0 ,
তাহলে, e^(i π) = cos π + isin π
= -1+ 0 = -1
সুতরাং, e^(i π) + 1 = 0
ইহাই নির্ণেয় সমীকরণ।
এখন আমরা অয়লারের এই সমীকরণ থেকে আবার সহজেই অয়লারের অভেদ পেতে পারি।
ধরি, z = cosθ + isinθ
এখন উভয়পক্ষকে অন্তরীকরণ করে পাই,
এখন উভয়পক্ষকে অন্তরীকরণ করে পাই,
dz/dθ= - sinθ+icosθ
= icosθ+ (i^2)sinθ [i^2 = -1]
=i{cosθ+isinθ}
সুতরাং, dz/dθ= iz
বা, dz/z=idθ
এখন উভয়পক্ষকে সমাকলন করে পাই,
lnz = iθ + c [c= ধ্রূবক]
যখন , θ=0, z=1
সুতরাং ধ্রুবক c=0 পাই,
তাহলে lnz=iθ
=> z= e^(i θ)
lnz = iθ + c [c= ধ্রূবক]
যখন , θ=0, z=1
সুতরাং ধ্রুবক c=0 পাই,
তাহলে lnz=iθ
=> z= e^(i θ)
অতএব, e^(i π) = cosθ + isinθ ।
আমরা আলোচ্য সমীকরণ e^(i π) + 1 = 0 তে ফিরে যাই ! গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাচঁটি ধ্রুবক (π , 0 , 1 , i, e) এই সমীকরণে দেখা যাচ্ছে। এই পাচঁটি ধ্রুবকসহ এমন সমীকরণ আর নেই। তাহলেই, বুঝুন কেন এই সমীকরণকে সুন্দর সমীকরণ বলা হয় !