আমাকে আজীবন আমার বন্ধু-বান্ধব, ক্লাস মেট, আশপাশের মানুষজন বেকুব টাইপ মানুষ ভেবে এসেছে। ক্লাস মেটরাতো আমাকে গরু-গাধা ভাবত। ছোট বেলা থেকে বড় হতে হতে আশপাশের মানুষজনদের দেখেছি স্রেফ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে।
নানা লেখায় আমি সেটা জানানও দিয়েছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমারতো অনেক আগেই থেমে যাওয়ার কথা ছিল। ভেবেছিলাম আমার এবারের ট্রিপ আর কনফারেন্স নিয়ে আর কিছু লিখবো না। মানুষজন না আবার ভেবে বসে- নিজেকে কেবলই জাহির করছি!
ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে কনফারেন্স। পৃথিবীর নানান দেশ থেক আসা এই কনফারেন্সে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই নিজেদের রিসার্চ পেপার প্রেজেণ্ট করেছে। সাধারণত কনফারেন্স গুলোতে বেশ কিছু অবজারভারও থাকে। যারা নিজেরাও শিক্ষক কিংবা গবেষক। এদের কাজ হচ্ছে পুরো কনফারেন্সে যারা প্রেজেন্ট করছে কিংবা কমেন্ট করছে সেগুলো অবজারভ করা এবং কনফারেন্সের একদম শেষে নিজেদের পর্যবেক্ষণের উপর মতামত তুলে ধরা। তো, এই কনফারেন্সে মাত্র একজন পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। কনফারেন্সের একদম শেষে ওই প্রফেসর ভদ্রমহিলা পুরো কনফারেন্স সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছিলেন। একদম শেষে তিনি যা বলেছেন সেটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
ভদ্রমহিলা বলেছেন- আমিনুলের প্রেজেন্টেশনটা আমার সব চাইতে বেশি ভালো লেগেছে। সে সবাইকে যুক্ত করতে পেরেছে এবং পুরো কনফারেন্সে ওকে আমার সব চাইতে অ্যাকটিভ মনে হয়েছে। সবাই যখন হাততালি দিচ্ছিল, আমি তখন ভাবছিলাম- আমি আজীবন ব্যাক বেঞ্চার ছিলাম বাংলাদেশে। বোধকরি আমাদের শিক্ষকরাও পেছনে বসার জন্য আমাকে গাধা টাইপ খারাপ ছাত্র ভাবত! বিদেশে এসেও সব জায়গায় পেছনের দিকেই বসেছি। তবে ফলাফলটা কেবল ভিন্ন। ভদ্রমহিলা যখন বলছিলেন- Gentleman sitting at the back is the front liner of this conference! আমি তখন ভাবছিলাম- ও তাইতো! আমি তো সব সময় ব্যাক বেঞ্চারই ছিলাম!
(আপনারা নিশ্চয় আমাকে ক্ষমা করবেন এভাবে নিজেকে জাহির করার জন্য। খুব লিখতে ইচ্ছে করল; তাই ভাবলাম লিখে ফেলা যাক!)
লিখেছেন : আমিনুল ইসলাম
শিক্ষক ও গবেষক, ইউরোপ
সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়