ব্রক্ষগুপ্তের পর জন্মেছিলেন মহাবীর, শ্রীপতি,শ্রীধর,ভাস্কতী রচনাকার শতানন্দ ও চক্রপাণি দত্ত।এই বিজ্ঞানী দের সময়কাল প্রায় পাঁচশো বছর ধরে বিস্তৃত ছিল।
১১১৪ খ্রিস্টাদ্বে ভারতীয় জ্ঞানের আকাশে জন্ম নিলেন ভাস্কর।
ভাস্কর |
সবার মতেই তিনি তৎকালীন সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ। সর্বজনমান্য বিজ্ঞান-ঐতিহাসিক জর্জ সার্টন, তাঁর বিজ্ঞনের ইতিহাস বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডের ২১২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন - 'বারো শতকের এই গণিতবিদ কেবল কুশলী ব্যাখ্যাকরই ছিলেননা, অনেক নতুন জিনিসের তিনি আধুনিক ব্যাখ্যা করেছিলেন৷ বীজগণিতে তাঁর যা পন্ডিত্য ছিল, আর কোনো হিন্দু গণিতজ্ঞের মধ্যে দেখা যায় নি। দুঃখের বিষয়, ভাস্কর এমন সময় এলেন যখন ইউরোপে জ্ঞান - বিজ্ঞানের নবজন্ম হচ্ছে আর এই অঞ্চলে জ্ঞান - বিজ্ঞান অস্তমিত হচ্ছে। কর্ণাটকের বিজ্জবিড় শহরে থাকতেন ভাস্কর। এই শহর টির নতুন নাম হয়েছে বিজাপুর।তার বাবা ছিলেন দৈবজ্ঞাচূড়ামণি মহেশ্বর উপাধ্যায়। এসব কথা আমরা জানতে পারি একটা তামার ফলক থেকে। থলকটি নাসিক থেকে সত্তর মাইল দূরে চালিস গাঁ নামে এক জায়গায় ভাউদাজি আবিষ্কার করেছিলেন। কয়েক পুরুঘ ধরে ভাস্করের পরিরার ছিল বিদ্বান মানুষে পরিপূর্ণ। ভাস্করের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা 'সিদ্ধান্ত-শিরোমণি'। ছত্রিশ বছর বয়সে তিনি এই বই লিখে ছিলেন। এই প্রতিভাধর মানুষটি বেঁচেছিলেন সত্তর বছর। 'করণ-কুতুহল' ও' সর্বতোভদ্র যন্ত্র' বই দুইদিছিল তাঁর ই রচনা। 'সিদ্ধান্ত - শিরমণি ' বইটিতে রয়েছে চারটি খন্ড - লীলাবতী, বীজগণিত, গ্রহগতিতাধ্যায় আর গোলাধ্যায়। 'লীলাবতী' খন্ডটি নিয়ে একাদ্বিক কাহিনী রয়েছে। লীলাবতী আর বীজগণিত হচ্ছ গণিতের বই গণিতের বইয়ের নাম লীলাবতী হল কেন? কেউ কেউ বলেন লীলাবতী ছিলেন ভাস্করের কণ্যা।খুব অল্পবয়সে বিধবা হয়ে বাবার ঘরে চলে আসেন...
বাবা তাঁকে পাশে বসিয়ে ধীরে ধীরে পাটিগণিত শেখান। তখনই তিনি পাটি গণিত বইটি লেখেন। মেয়ের নামে নাম দেন লীলাবতী। সবই লোকমুখে প্রচলিত প্রবাদ। আজ তা প্রমানের উপায় নেই। তবে বইয়ের নানা জায়গায় এমন কিছু সম্বোধন রয়েছে, অনেকে ভাবছেন লীলাবতী এক কল্পিত নাম। কোথাও বলেছেন 'অয়ি বালে লীলাবতী', কোথাও সখে কান্তে,বৎসে বলেও সম্বোধন করেছেন। "লীলাবতী"লেখার ধরণটাও অসাধারণ। কথা বলতে বলতে অঙ্ক শেখাচ্ছেন। " লীলাবতী কথাটার মানে গুণসম্পন্ন। এমনও হতে পারে যে তার "সিদ্ধান্ত - শিরোমনিকে" গুণসম্পন্ন বলতে চেয়ে তিনি লীলাবতী নামটি গ্রহণ করেছেন। "লীলাবতী" খন্ডে বাক্ষগুপ্ত,শ্রীধর,আর পদ্ননাভের নাম উল্লেখ করেছেন। শ্রীধর দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধানের যে উপায়বের করেছিলেন,আজ ও তা আমাদের পড়ানো হয়। কিন্তু তিনি নাকি দ্বিঘাত সমীকরণের উপর ১টি বই ও লিখেছেন। বইটি আমরা কখনো দেখতে পায়নি। পদ্ননাভের বীজগণিতের কথা আমরা ভাস্করের বই থেকে ১ম জানতে পরেছি। ভাস্কর যখন বীজগণিত নিয়ে আলোচনা করছেন কোনো রাশিকে শূণ্য দিয়ে ভাগ করলে কী হয় তা বলেছেন। তিনিই বলেছেন, ঋনাত্বক রাশিকে ঋণাত্বক রাশি দিয়ে গুণ করলে ফলটি হবে ধনাত্মক। কিন্তু ঋনাত্বক রাশিকে ধনাত্মক রাশিদিয়ে গুণ করলে ফলটি হবে ঋনাত্বক। এখন অঙ্গাত রাশি বলতে আমরা " X " বসাই। ভাস্কর বলেছিলেন,দেবনাগরী কোনো বর্ণ দিয়ে অঙ্গাত রাশি চিহ্নিত করা হোক। নানারকম দ্বিঘাত সমীকরণ কে পালটে নিয়ে একটা অসাধারণ আকার দিয়ে এরপর সমাধানের উপায় বলেছিলেন তিনি। কিছু বিশেষ ধরণের ত্রিঘাত সমীকরণের ও তিনি সমাধান করেন। জ্যামিতিতে ভাস্করের অবদান উল্লেখযোগ্য। সমকোণী আর সুষম বহুভুজ নিয়ে তিনি "পাই" এর মান বের করেছিলেন ৩.১৪১৬৬৬।কেনে যন্ত্র ছাড়াই, ৩৮৪ বাহুর এক ত্রিভুজ কল্পনা করেছিলেন তিনি।তিনি গোলকের তলের পরিমাও..
আয়তন নির্ণয় করেছিলেন। করতে গিয়ে গোলকটিকে ছোট ছোট করে ভাগ করেনিয়েছেন ও পরে যোগ করেছেন । বিষয়টা নিউটনের আবিষ্কৃত ইনটিগ্রাল ক্যালকুলাসের মতোই অনেকটা তবে নিউটন এসেছিলেন আরও পাঁচশো বছর পরে। অন্যদিকে আবার গ্রহের গতি পরিমাপ করেছিলেন ভাস্কর, ডিফারেনসিয়াল ক্যাকুলাসের মূল নীতী কে ব্যবহার করে।গ্রহের তাৎক্ষণিক গতি মেপেছেন । একে ডিফারেনসিয়াল ক্যালকুলাস ছাড়া কি আর বলা যেতে পারে। এক সেকেন্ড সময় কে ৩৪০০০ ভাগে ভাগ করেছিলেন। এক একটি ভাগের নাম দিয়েছিলেন "ত্রুটি" । ক্যালকুলাস গণিতের এক অভিজাত শাখা। তার কৃতিত্ব ভারতীয় গণিতবিদ দের দখলে চলে আসছে, বিষয়টা অনেক ইউরোপীয় এক সময় সু নজরে দেখেনি। নানা ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ বিষয়টিকে ছেড়ে দিলেন না। তিনি দেখালেন , পশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরাও শুরুতে একই রকম অসম্পূর্ণতা নিয়ে কাজ করেছেন। সীমাবদ্ধ তার কথা যদি বলতে হয়, ভাস্কর ও পশ্চাত্যের গণিতবিদরা একই দোষে দুষ্ট। ত্রিকোণমিতি'তে সাইন, কোসাইনের নানা ডিগ্রি কোনের একএকটি মান রয়েছে এই কাজ টি করেছিলেন ভাস্কর৷ ভাস্কর ১ডিগ্রি অন্তর কোণের সাইন,কোসাইন বের করেছিলেন। যেমন তার হিসাবে -- সাইন ১°=১০/৫৭৩ কোসাইন ১°=৬৫৬৫/৬৫৬৯ ১টি অসাধার সম্পর্ক ভাস্কর নির্ণয় করেছিলেন। যদি কোনো বৃত্তের ব্যাস পরিধি, চাপ ও জ্যা d,p,a এবং c হয় তবে - c= [4da(p-a)/{5/4p২-a(p-a)}] তরলের পৃষ্ঠটান ধর্মের কথা ও ভাস্করের জ্ঞাত ছিল। আমাদের দেশে বহুূদিন ভাস্করের প্রভাব ছিল।
লিখেছে - নাজমুল হাসান