অসহনীয় গরম পড়েছে । আবহাওয়াবিদরাও শংকিত এই প্রচন্ড তাপদাহ নিয়ে । নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় এই তাপদাহ তে আপনি ‘ হিটস্ট্রোক ‘ এ আক্রান্ত হবার ব্যাপক ঝুঁকিতে আছেন ।
প্রচন্ড গরমে যখন শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় , মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের ( Hypothalamus) এর Thermoregulatory centre ( তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অংশ ) তার কার্যক্ষমতা হারায় , দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায় - তখন হঠাৎ করে আপনি হিট স্ট্রোক / থার্মিক ফিভার এ আক্রান্ত হতে পারেন ।
গরমে কুপকাত |
.
আমাদের শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়া বা metabolism এ তাপ উৎপন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত । দেহের তাপমাত্রা বাড়লে শরীর মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রক্তনালীর প্রসারণের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় তাপ পরিবেশে উন্মুক্ত করে দেয় । মাত্রাতিরিক্ত গরমে এই তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্হা হঠাৎ বিকল হয়ে যেতে পারে । আপনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন । শরীরের অতিরিক্ত পানিশূণ্যতা বা cellular dehydration এর কারণে আপনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন , এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে ।
.
Heat stroke এর লক্ষণ :
- প্রচন্ড মাথাব্যাথা ( Throbbing Headache )
- তন্দ্রাচ্ছন্নতা ( Dizziness )
- প্রচন্ড গরমেও শরীরের ঘাম উৎপাদন কমে যাওয়া ( মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্হা বিকল হয়ে গেলে )
- লাল , গরম , শুষ্ক চামড়া ( Red , hot dry skin )
- মাংশপেশী ব্যাথা এবং টানটান অনুভূতি ( Muscle weakness and cramps )
- মাথা ঘুরানো , বমি বমি ভাব , বমি ( vertigo , nausea , vomiting )
- দ্রুত হৃদস্পন্দন ( rapid heart rate ) ,
- ঘন ঘন দূর্বল শ্বাস নেয়া ( Rapid shallow breathing )
- হঠাৎ আচরণগত ত্রুটি , কনফিউশান , কাওকে চিনতে না পারা ( Behavioural changes , confusion , disorientation )
- খিঁচুনি ( seizure )
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ( unconsciousness )
.
হিটস্ট্রোক হলে করণীয় -
আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা স্হানে নিয়ে যাওয়া , জামাকাপড় খুলে ফেলা , শরীরে ঠান্ডা বরফ দেয়া ( আইস প্যাক না পাওয়া গেলে ঠান্ডা পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে শরীর স্পন্জ করে দেয়া ) ,
শরী ঠান্ডা পানি দিয়ে পুরো ভিজিয়ে দেয়া ,
রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্হানান্তর ।
.
হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয় -
১| প্রচুর পানি খান যেহেতু পানিশূন্যতা থেকেই হিট স্ট্রোক হয়। খাবার পানির পাশাপাশি কাচা আমের ঘরে তৈরি জুস, লেবু, বেল, তরমুজের শরবত খেতে যেমন ভালো লাগবে, তেমনি তা আপনার দেহের পানিশূন্যতা পূরণ করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনবে।
.
২। পোশাক পরুন ঢিলেঢালা ও হালকা রঙ্গের। গরমে আঁটসাঁট পোশাক থেকে শরীরকে রেহাই দিন।তীব্র গরমে হালকা রঙ এর, ঢিলেঢালা সুতি কাপড়ের পোশাক বেছে নিন। নরম কাপড়ের অন্তর্বাস অবশ্যই ব্যবহার করুন। কেননা এটি দ্রুত ঘাম শুষে নিয়ে আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে।
.
৩। জাঙ্ক ফুড একেবারেই নয়। গরমের এই দুই মাস ফাস্টফুডকে না বলুন। কেননা এতে থাকা অতিরিক্ত লবন, তেল গরমে আপনার শরীরকে আরো বেশি ক্ষতিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। শরীর ঠান্ডা থাকে এমন ঘরে তৈরি খাবার খান।
.
৪। গোসল করুন যতবার সম্ভব। প্রচন্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা যাতে সীমা অতিক্রম না করে, এজন্যে যতবার সম্ভব গোসল করুন। তবে প্রতিবার গোসলের পরে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। নইলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
.
৫। দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা থাকুন ছায়ায়। দুপুর ১২ টা থে ২ টায় রোদের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। অর্থাৎ গরমের পরিমাণটাও। তাই চেষ্টা করুন ঘরের বা অফিসের বাইরের জরুরী কাজগুলো এর আগে বা পরে সেরে ফেলার। এই সময়টার সরাসরি সূর্যতাপে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
.
৬। ব্যাগে রাখুন ছাতা, টুপি, পানি, সানগ্লাসব্যাগে এই গরমে কয়েকটা জিনিস রাখতেই হবে। ছাতা, টুপি, সানগ্লাস, পানি ছাড়াও রাখতে পারেন একটা পানি স্প্রে করার বোতল ও রুমাল। প্রচন্ড রোদে ঘেমে গেলে মুখে গলায় একটু পানি স্প্রে করতে পারেন।
.
৭। চা কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস নয় চা, কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস গরমে নিস্তেজ শরীরকে কিছুক্ষণের জন্যে সতেজ করলেও, এগুলোর কারণে শরীর থেকে পানি আরো দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে। তাই এর বদলে মৌসুমী ফল ও ফলের রস বেছে নিন। সুস্থতা, সতেজতা দুটোই একসাথে পাবেন।
.
৮। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা নয় প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন। কাজের প্রয়োজনে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা লাগলে সেক্ষেত্রে একটু পর পর ছায়ায় যাবার চেষ্টা করুন। ছাতা, সানগ্লাস, টুপি যা কিছু সম্ভব ব্যবহার করে রোদ থেকে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করুন।
.
৯। খাদ্যতালিকার রাখুন সবজি ও ফল দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানি জাতীয় খাবারগুলোকে কিছুদিনের জন্যে বিদায় দিন। এর বদলে ভাত, কম তেল মশলায় রান্না মাছ, প্রচুর পরিমাণে সবজি খেতে পারেন। কম তেলে রান্না খাবার আপনাকে এই গরমে সতেজ রাখবে।
.
১০। তাপমাত্রার পরিবর্তন খেয়াল রাখুন নিজের চারপাশের তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গা থেকে বেরিয়েই প্রচন্ড রোদে চলে যাবেন না। বা প্রখর রোদ থেকে এসেই হুড়মুড় করে এসি রুমে ঢুকবেন না। একটু সময় নিন। নইলে তাপমাত্রার হঠাত পরিবর্তনের সাথে আপনার শরীর মানিয়ে নিতে না পারার কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। হিট স্ট্রোক যেকোন সময় যে কারোই হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের এই ঝুঁকি বেশী। তবে সব মানুষেরই এ থেকে সাবধান থাকা উচিত। সুস্থ থাকুন।
.
তথ্যসূত্র - ইন্টারনেট , ব্লগ , মেডিকেল জার্ণাল
সংকলন : ডা: আসিফ উর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
SSMC- 31st batch