জাদুঘরে সংরক্ষিত Antikythera Mechanism |
উইকিপিডিয়া মতে প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। Compute শব্দটি থেকে কম্পিউটার শব্দটির উৎপত্তি , যার অর্থ ছিল গননা করা , গননার ইতিহাস অনেক অনেক আগের , প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গননা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গননা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়। এর মাঝে পেড়িয়ে গেছে অনেক সময় , এবাকাস গননা যন্ত্র হলেও একে কম্পিউটার এরমর্যাদা দেয়া হয়নি । কম্পিউটার তাহলে কত আগের ? ২০০ বছর না ৩০০ বছর , শুনলে অবাক হবেন যে প্রথিবীর সবচেয়ে প্রাচিন কম্পিউটার হিসেবে যে যন্ত্রটিকে বিবেচনা করা হয় তা প্রায় ২ হাজার বছর আগের , কম্পিউটারটির নাম দেয়া হয়েছে The Antikythera Mechanism , এটি একটি দ্বীপের নামে নাম করন করা হয়েছে , এর নাম করনের ঘটনাটিও বেশ মজাদার , আজ থেকে প্রায় ১১৯ বছর আগে ঠিক ১৯০০ সালে গ্রীসের এজিয়ান সমুদ্রপথে প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়েন ক্যাপ্টেন দিমিত্রি ও তার একদল নাবিক , প্রচন্ড ঝড়ে যখন অবস্থা ভিশন খারাপ তখন বাধ্যে হয়েই জাহাজ নোঙর ফেলার চিন্তা করে ,সামনেই ছিল অ্যান্টিকিথেরা আইল্যান্ড , কোনমতে দ্বীপের কাছে পোছায় জাহাজটি এবং সেখানে আশ্রয় নেয় সবাই , সকালে ঝড় কমে আসলে কিছু সামুদ্রিক স্পঞ্জ সংগ্রহের জন্য জাহাজের অন্যান্য নাবকদের নির্দেশনা দেয় , কিছুক্ষনের মধ্যে জানতে পারেন সমুদ্রের নিচে বড় কিছু একটা রয়েছে , কৌতুহলী হয়ে আরো কয়েকজন নিয়ে ক্যাপ্টেন নিজেই নেমে পড়েন পানিতে ,খুজে পান একটী জাহাজ , সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় ব্রোঞ্জের একটি মুর্তি । ক্যাপ্টেন গ্রীসে ফেরত গিয়ে এই ডুবে থাকা জাহাজের ব্যাপারে নৌবাহিনিকে জানান , নৌবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল প্রায় ২ বছর ধরে ডুবে থাকা জাহাজে অভিজান চালালো ।
উদ্ধারকৃত বস্তুগুলো যাদুঘরে দেয়ার স্বীদ্ধান্ত হয়...
উদ্ধারকৃত বস্তুগুলো যাদুঘরে দেয়ার স্বীদ্ধান্ত হয়...
জাদুঘরে সংরক্ষিত Antikythera Mechanism |
জাদুঘরে যাওয়ার পূর্বে পূরাতত্ব পরীক্ষায় একটি পাথরে কয়েকটি গিয়ার এর মত জিনিস আটকে থাকায় সেসময় কৌতুহলের সৃষ্টি হয় , এটি নিয়ে গবেষনার দায়িত্বে ছিলেন ভালেরস স্তাইস । তিনি কোন ভাবেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না পাথরটি এমন কেন । বেশ কিছুদিন পর তিনি বুঝতে পারলেন এটির গঠন তিনি যা ভেবেছিলেন তার চেয়েও অনেক বেশী জটিল । এটির রহস্য উদ্ধারে আরো মানুষের সাহায্য প্রয়োজন । খবর ছড়ানোর পর বহু গবেষক এটি নিয়ে গবেষনায় নেমে পড়লেন , কিন্তু ১৭ সেন্টিমিটারের এই ছোট বস্তু সবার মাথা খারাপ করে ফেলল , কারন এমন মেকানিজম সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই তাদের ।
বিশ্বের নামিদামি মানুষ এটি নিয়ে গবেষনা করেও ৭৫ বছর পর্যন্ত এর কোন সুরাহা করতে পারল না । তবে ধীরে ধীরে মানুষ অনেক কিছু উদ্ধার করতে সম্ভব হয় , প্রযুক্তির কল্যানে বেড় করা হয়েছে এর বয়স , যন্ত্রটি প্রায় ১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব তৈরী করা হয়েছিল মানে ২১০০ বছর এর ও আগে , এবং জাহাজটি প্রায় ৬০ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে পানীর নীচে রয়েছে , যন্ত্রটিকে গ্রীক সভ্যতার একটি অংশ ধরা হয় ,এর উদ্ভাবক রোডস দ্বীপের বাসিন্দা ছিলেন । ১৯৭০ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা এই যন্ত্র পুনরায় তৈরীর স্বীদ্ধান্ত নেন । সকল টুকরার এক্সরে ইমেজিং এর মাধ্যমে একটী নকশা দাড় করান । সকলের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যায় এই যন্ত্রের কাজ , দেখা গেল এই যন্ত্রটি দিয়ে তখন আবিষ্কার হওয়া ৫ টি গ্রহের গতিবিধি একদম সূক্ষ ভাবে হিসাব করা যেত ।
হঠাৎ করেই আলোচনার ঝড় তুলে দিলেন বিজ্ঞানী দানিকেন , তিনি ঘোষনা দিলেন এই যন্ত্র পৃথিবীর কারো তৈরী নয়। তিনি কারন হিসেবে জোড়ালো একটী যুক্তি দেখান , যা আসলেই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন , তিনি দেখান এই যন্ত্র ব্যাবহারকারীরা জানত সূর্যকে কেন্দ্র করে অন্যান্য গ্রহ গুলো ঘুড়ছে , কিন্তু এই যন্ত্র তৈরীর ও দেড় হাজার বছর পড়ে মানুষ কোপার্নিকাস মডেল থেকে সৌরজগত সম্পর্কে ধারনা পায়।
আবার এটি ৯৫% কপার এবং ৫% টিনের মিশ্রণে তৈরি। কপার আর টিনের মিশ্রণে একটি যন্ত্রাংশ তৈরি হবে যা সর্বপ্রকার মরিচা-রোধক হবে এই ধারনাই আমরা পেয়েছি কয়েকশ বছর পূর্বে,
আবার শুরু হয় গবেষনা ২০০৬ সালে সিটি স্ক্যান করে জানা যায় যন্ত্রের গায়ে একটি ম্যানুয়াল রয়েছে , গ্রীক ভাষাবিদ রা মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ২০০০ বছরের প্রাচীন এই ম্যানুয়াল এর পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয় ।
আবার এটি ৯৫% কপার এবং ৫% টিনের মিশ্রণে তৈরি। কপার আর টিনের মিশ্রণে একটি যন্ত্রাংশ তৈরি হবে যা সর্বপ্রকার মরিচা-রোধক হবে এই ধারনাই আমরা পেয়েছি কয়েকশ বছর পূর্বে,
আবার শুরু হয় গবেষনা ২০০৬ সালে সিটি স্ক্যান করে জানা যায় যন্ত্রের গায়ে একটি ম্যানুয়াল রয়েছে , গ্রীক ভাষাবিদ রা মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ২০০০ বছরের প্রাচীন এই ম্যানুয়াল এর পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয় ।
ম্যানুয়াল দেখে যন্ত্রটির ডিজাইন করা হয় ও পরে প্রকৌশলীরা এটির একটী রেপ্লিকা তৈরীতে নেমে পড়ে । রেপ্লিকা তৈরীর দায়িত্বে ছিল মাসিমো মোগি ভিসেন্টি, ২০০৭ সালে রেপ্লিকা তৈরীর কাজ সমাপ্ত করা হয় । ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থেকে এই যন্ত্রটি দিয়ে কি কি করা যেত তার তালিকা । শুধু কি গ্রহের গতিবিধী ? না । এটি দিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, মিশরীয় ক্যালেন্ডার, সথিক এবং কালিপিয় চক্র নির্ভুল ভাবে নির্ণয় করা যায় । তৈরীকাল হতে ৫০০ বছর পর্যন্ত এটি দিয়ে একদম নির্ভুল ভাবে গ্রহের গতিবিধি জানা গিয়েছে ,যোগ বিয়োগ ,গুন , ভাগ ও করা যায় এটি দিয়ে ।
এর গবেষনা শেষ হয়নি এখনো , সম্পূর্ন রহস্য এখনো এর উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি । ব্রিটিশ ইতিহাসবেত্তা ডেরেক প্রাইস এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কম্পিউটার হিসেবে দাবি করেন। এই যন্ত্রের অনুসন্ধানকে ইতিহাসের সেরা অনুসন্ধানের মধ্যে অন্যতম ধরা হয়। বলার কোন অপেক্ষা রাখে না অসম্ভব মেধাবী কোন ব্যাক্তি দ্বারা এটি তৈরী , এটি প্রমান হয় যে সে সময়ের গবেষক দল তাদের সময় বিবেচনায় জ্ঞানের দিক দিয়ে কয়েকশ বছর বেশী এগিয়েছিল । আবার বিজ্ঞানী দানিকেন এর পৃথিবীর বাইড়ের প্রানীর কথাও কিন্তু ফেলনা নয় ।
এই সম্পর্কে ইউটিউব , গুগলে অনেক কন্টেন্ট রয়েছে আগ্রহ থাকলে ঘাটাঘাটি করে নিতে পারেন । সামনের ১৭ই মে Antikythera Mechanism আবিষ্কারের ১১৭ তম বছর হতে যাচ্ছে।
-ফেসবুক থেকে