১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই, এক ভয়াল ঝড়বৃষ্টি আর বজ্রপাতের রাতে টেসলার জন্ম। পরিবেশের ভয়াবহতা দেখে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধাত্রী বলেছিলো, “এ বাচ্চা হবে অন্ধকারের সন্তান” কিন্তু সদ্যোজাত টেসলার ফুটফুটে মুখটার দিকে তাকিয়ে তার মা বলেছিলেন, “না, এ হবে আলোর সন্তান।” প্রকৃতই এই সন্তান পরিণতকালে গোটা বিশ্বে আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলো।টেসলার জন্ম বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার মিলজান নামক স্থানে।বাবা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। নানাও ছিলেন তাই। ৫ ভাই বোনের মধ্যে ছিলেন চতুর্থ। বড় ভাই মারা গিয়েছিলেন ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে। তার বাবার ইচ্ছে ছিল নিকোলা-ও বড় হয়ে প্রিস্ট হবে তার মত। ছোট থেকেই তাকে সেটা নিয়ে চাপ দিতেন। কিন্তু নিকোলা সেটা চাইতেন না, একদমই না।১৮৬১-তে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন নিকোলা, শেখেন জার্মান ভাষা, গণিত আর ধর্মতত্ত্ব। ১৮৭০ সাল। ক্রোয়েশিয়ার এক স্কুলে ম্যাথ ক্লাস চলছে।আজকের টপিক ইন্টিগ্রেশন। বেশ কটা ক্লাসের পর আজকে কঠিন কঠিন ইন্টিগ্রেশন শুরু।
বোর্ডে কতগুলো অঙ্ক লিখে টিচার ফিরলেন সবাই অঙ্ক করছে কিনা দেখতে। সবাই মনোযোগ দিয়ে করছে। কিন্তু একজন বসেই আছে। স্যার তার দিকে এগিয়ে গেলেন। “তুমি কেন করছ না?” ১৪ বছরের সেই ছেলেটা বোর্ডের সবগুলো অংকের উত্তর বলে গেল।স্যার ভাবলেন ছেলেটা উত্তর হয়ত মুখস্ত করে এসেছে। তিনি বানিয়ে কয়েকটা দিলেন। ছেলেটা এবারও সবগুলোর নির্ভুল উত্তর বলে দিল! একবারও খাতা কলম হাতে নিল না। টিচার বুঝতে পারলেন, এইছেলে ভয়ঙ্কর মেধাবী। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর মেধাবীকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনে আসি না। যতটা না চিনি নিউটন আইন্সটাইন কিংবা টমাস আলভা এডিসনকে।চার বছরের পড়া তিন বছরেই শেষ করে গ্র্যাজুয়েট করে ফেললেন তিনি ১৮৭৩ এ। সে বছরই ফিরে গেলেন নিজের গ্রামে। এসে কলেরার প্রকোপে পড়লেন। খুব ভয়ংকর অবস্থা। নয় মাস ছিলেন শয্যাশায়ী।কয়েকবার মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন।নিকোলার বাবা অসহায় হয়ে তাকে কথা দিলেন, সুস্থ হলে তাকে সবচেয়ে ভাল ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে পড়তে পাঠাবেন। আর বলবেন না যাজক হতে। টেসলা সুস্থ হয়ে উঠলেন এক সময়।
১৮৭৪ সালে নিকোলা আর্মিতে ভর্তি হওয়া থেকে বাঁচতে পালিয়ে গেলেন। পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরলেন। টেসলা পরে বলেছিলেন,প্রকৃতির সাথে এই নৈকট্যটা অনেক দরকার ছিল তার। বসে বসে মার্ক টোয়েন পড়তেন তিনি। ১৮৭৫ এ টেসলা ভর্তি হলেন অস্ট্রিয়ান পলিটেকনিকে। তাঁর স্বপ্ন। ফার্স্ট ইয়ারে তিনি একটা লেকচারও মিস করেন নি। সবগুলোতে ছিল হায়েস্ট গ্রেড। ডিনের থেকে লেটার পেয়েছিলেন তার বাবা, “আপনার ছেলে প্রথম শ্রেণির স্টার।”প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে রাত ১১টা (২০ ঘণ্টা) পর্যন্ত টানা খাটতেন তিনি। কোন ছুটির দিনও বিশ্রাম নিতেন না। ১৮৭৯ তে বাবা মারা যাবার পর বাবার পুরনো চিঠি ঘাটতে গিয়ে দেখলেন সেখানে তার প্রফেসরদের কাছ থেকে চিঠি আছে, “আপনার ছেলেকে এখুনি স্কুল থেকে সরিয়ে নিন। নাহলে খাটতে খাটতে মারাই যাবে।”সেকেন্ড ইয়ারে “কমুটেটর দরকার কি দরকার না” সেটা নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রফেসরের সাথে। সে বছরই জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন নিকোলা আর স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যায় তার। থার্ড ইয়ারে তিনি তার সব সম্পদ জুয়ায় উড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কিন্তু জুয়া খেলেই সব আবার earn back করেন। পরে তার বিলিয়ার্ড খেলার নেশা ধরল।এক্সাম টাইম আসার পর, টেসলা আবিষ্কার করলেন তিনি কিছুই পড়েন নি। তিনি পিএল বাড়াতে চাইলেন। কিন্তু তার দাবি অগ্রাহ্য করা হল। তিনি গ্র্যাজুয়েট করতেই পারলেন না। লাস্ট সেমিস্টারের কোন গ্রেডই তার ভাগ্যে জুটল না। হয়ে গেলেন একজন ড্রপ-আউট।