শরীরে একটার বেশি মাথা থাকলে তাকে বলে পলিসেফালি। হ্যাগ্রিডের কুকুর ফ্লাফির ছিল তিনটা মাথা, হারকিউলিসের দানব হাইড্রার একটা মাথা কাটলে আরও কয়েকটা মাথা বের হতো, দৈত্যদের রাজা দশ দিকে দশ মাথা দিয়ে তাকিয়ে রব ছাড়ত বলে তার নাম হয় রাবণ। পলিসেফালি খুব রেয়ার, কিন্তু অসম্ভব নয়, হাজার বছর ধরে হাজারো গল্পে আর কাহিনীতে এদের কথা উঠে এসেছে।
দুই ধরনের কারণে শরীরে একাধিক মাথা থাকতে পারে। প্রথম কারণটা হলো কঞ্জয়েন্ড টুইনঃ জোড়া লাগানো যমজ। জাইগোটের অসম্পূর্ণ বিভাজনের ফলে জোড়া লাগানো যমজ হয়। যেসব জোড়া লাগানো যমজের শরীরের নিচের দিকের অঙ্গগুলো এক থাকে, উপরের দিক থেকে আলাদা হয় তাদের বলে Dicephalic parapagus twins. এদের এক দেহ, দুই মাথা। দ্বিতীয় কারণটা আরও ভয়ানক, শেষে বলব।
একটা শরীরে দুই মাথা মানে দুইটা কনশাসনেস। দুইটা সত্ত্বা। এদের একজন ডানদিকটা কন্ট্রোল করে, আরেকজন বামদিকটা। দুই মাথাওয়ালা কচ্ছপ আছে, ইঁদুর আছে, সাপ আছে, মানুষও আছে। দুই মাথাওয়ালা সাপ খুব বেশিদিন বাঁচে না, খাবারের জন্য মারামারি করে, শরীরের কন্ট্রোল নিয়েও নিয়মিত যুদ্ধ লাগে, একজন ডান দিকে গেলে আরেকজন যেতে চায় বামে। তাদের চলাফেরা হয় খুবই ধীরগতির, খুব সহজে মারা পরে।
মানুষের ক্ষেত্রে এক দেহ দুই মাথা খুবই রেয়ার। দুইটা কেস বলিঃ
১। টক্কি টুইন: ১৮৭৭ সালের দিকে ১৯ বছর বয়সী মারিয়া লুইগিয়ার গর্ভে তাদের জন্ম। এক দেহ দুই মাথা। ৪টা হাত, ২টা হার্ট, ২টা পাকস্থলী। তার নিচ থেকে তারা এক মানুষ। অন্ত্র একটা, জননাঙ্গ একটা, পা একজোড়া। সন্তান জন্মের পর বাবা একমাস পাগলাগারদে ছিল। বড় হওয়ার পর এই বাবাই তাদের সার্কাসে দিয়ে আসে। টক্কি ভাইয়েরা বড় হয়ে বিয়ে করেছিল শোনা যায়। কেউ কেউ বলে তাদের বাচ্চাও হয়েছিল। টক্কিরা হাঁটতে পারতো না।
২। হ্যান্সেল টুইন: অ্যাবি আর ব্রিটানি হ্যান্সেল এই যুগের মানুষ। ১৯৯০ সালে জন্ম। একজন ডানদিকটা কন্ট্রোল করে আরেকজন বামদিকটা। তারা হাঁটতে পারে। দৌড়াতে পারে। সাঁতারও কাটতে পারে। শরীরটা কাঁধ পর্যন্ত এক, উপরে দুইটা মাথা। ভেতরে দুইজনের আলাদা হার্ট লাংস আর পাকস্থলী আছে।
সবশেষে দ্বিতীয় ধরনের পলিসেফালিঃ প্যারাসাইটিক টুইন। ধরেন আপনার মাথার সাথে আপনার যমজের মাথা লাগানো। শুধু মাথাটা। আপনার ওই যমজ ভাইটির শরীর নেই। হাত পা বুক পেট কিচ্ছু নেই। সে শুধু একটা মাথা। আপনার মাথা থেকে পুষ্টি নিয়ে সে বেঁচে থাকে।
এই ঘটনা ঘটেছিল ১৭৮৩ সালে, তৎকালীন বাংলার মুন্দুল গ্রামে। ছোট একটা ছেলে তার মাথার পেছনে আরেকটা মাথা। শুধু মাথা, শরীর নেই। ওই মাথাটার চোয়ালটা অগঠিত, ছেলেটাকে যখন খাওয়ান হতো ওই মাথা থেকে লালা পড়ত। সে ঘুমালে দ্বিতীয় মাথাটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখত চারপাশ।