চিঠি পত্র লেখার সঠিক নিয়ম |
চিঠি পত্র প্রাত্যহিক জীবনে একটি গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে আমাদের চিঠি পত্র লিখতে হয় । চিঠি লেখার নিয়ম মেনে চিঠি পত্র লিখতে হয়। চিঠির মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা অত্যন্ত প্রাচীন একটি প্রথা । যা এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে ।
চিঠিপত্রের ব্যবহারকে প্রাতিষ্ঠানিক সকল কাজে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় । এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক আদেশ-নিষেধ পত্র বা চিঠির উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল । বর্তমান সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় চিঠি পত্র লিখার প্রবণতা কিছুটা কমেছে । কিন্তু এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতেই চিঠি এবং পত্র লিখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছি ।
চিঠি-পত্রের ধরন বা প্রকারভেদ
- ব্যক্তিগত চিঠি
- আবেদনপত্র বা দরখাস্ত
- সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য চিঠি
- মানপত্র ও স্মারকলিপি
- বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িকপত্র
- আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণপত্র
চিঠি বা পত্র লিখনের ক্ষেত্রে যে সকল দিকের খেয়াল রাখতে হবে
১. চিঠি-পত্রের কাঠামো নির্ভর করে বিষয়বস্তু উপর। ব্যক্তিগত চিঠি আর ব্যবসায়িক পত্রের মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই প্রকারভেদে চিঠি লেখার ধরনও আলাদা ।২. চিঠির মাধ্যমে মানুষের রুচি ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। তাই অস্পষ্ট এবং কাটাকাটি যেন না হয় , সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । সুন্দর হাতের লিখা সব সময় পাঠক পড়তে পছন্দ করে ।
৩. চিঠিতে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যে কোনো প্রকার চিঠি-পত্র লিখতে হয় মার্জিত ভাষায় । যতটা সম্ভব বই এর ভাষায় চিঠি লিখা উত্তম । এতে করে পাঠক, লেখকের ভাব বুঝতে সুবিধা হয় ।
ব্যক্তিগত চিঠিপত্র লিখার নিয়ম
চিঠি পত্রের অংশ বিশেষ
- শিরোনাম
- চিঠি বা পত্র গর্ভ
শিরোনাম
চিঠি বা পত্র গর্ভ
আবেদনপত্র বা দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আবেদনপত্র বা দরখাস্ত চিঠিপত্র হলো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারযোগ্য পত্র বা চিঠি । আবেদনপত্র বা দরখাস্ত লিখতে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাষায় । দরখাস্তে ব্যক্তিগত কোনো বিষয় উল্লেখ না করায় ভালো । সকল প্রতিষ্ঠানে এ নিয়মে লিখিত আকারে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ।
চিঠি লেখার নিয়ম এর আবেদনপত্রের প্রথম অংশে যে আবেদন করছে তার সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক কি তা নিয়ে এক লাইনে উল্লেখ করা যেতে পারে । কিন্তু মনে রাখতে হবে যে আবেদনপত্র বা দরখাস্তে যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ না করায় উত্তম । এখানে আবেদনকারি কেনো আবেদন বা দরখাস্ত করছে সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে ।
চিঠি লেখার নিয়ম এর আবেদনপত্র বা দরখাস্ত পত্রের পরের অংশে আবেদনকারি যার কাছে বা যে প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন লিখছে তাকে অনুরোধ সূচক বাক্য লিখতে পারে ।
একজন ব্যাক্তি পুরনো দিনের দোয়াত ও পালক দিয়ে চিঠি লিখছেন |
আবেদন পত্র বা দরখাস্ত লিখার একটি উদাহরণ
১. তারিখ
২. শিরোনাম/ প্রাপক ( বরাবর দিয়ে শুরু করে নিচে যার উদ্দেশ্যে লিখছেন তার পদবি এবং প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা )
৩. বিষয়
৪. সম্ভাষণ মহোদয়/ মহাত্মন/ জনাব, (যদি বাংলায় হয় তাহলে জনাব দিয়ে শুরু করতে হবে)
৫. আবেদন পত্রের পূর্ন বর্ণনা।
৬. ভদ্রোচিত বিদায়/ বিদায় সম্ভাষণ
নিচে আমি দুটো আবেদন চিঠির উদাহরন দিব একটি হল ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য অন্যটি চাকরিজীবিদের জন্য।
ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য আবেদনপত্র বা দরখাস্ত লিখার নিয়ম
তারিখ: ০০-০০-২---খ্রি.
বরাবর,
(ঠিকানা
প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ মহোদয়
........... বিদ্যালয়।
বিষয় : বড় বোনের বিয়ে উপলক্ষে তিন দিনের ছুটির জন্য আবেদন
সম্ভাষণ মহোদয়/ মহাত্মন/ জনাব,
সবিনয় বিনীত নিবেদন আমরা আপনার বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আগামী ------ সালে আমার বড় বোনের বিয়ে। এ কারনে আমার আগামী ------হইতে -----পর্যন্ত ছুটির প্রয়োজন।
অতএব,জনাবের কাছে আকুল আবেদন আমাকে ৩ দিনের ছুটি দিয়ে বাধিত থাকিবেন।
ভদ্রোচিত বিদায়/ বিদায় সম্ভাষণ (নাম ও স্বাক্ষরসহ) নিবেদক
আপনার বাধ্যগত শিক্ষার্থীবৃন্দ
----বিদ্যালয়/স্কুল/পাঠশালা
চাকরির জন্য আবেদন
তারিখঃ ০০-০০-২০১৯
বরাবর
স্থানের নাম
জেলার নাম
বিষয়ঃ সহকারী ব্যবস্থাপক পদের জন্য আবেদন।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শণ পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, গত ------- ইং তারিখ “দৈনিক----” পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি মারফত জানতে পারলাম যে, আপনার প্রতিষ্ঠানে ‘সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও শ্রমকল্যাণ)’ পদে কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে নিম্নে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী আপনার সদয় বিবেচনার জন্য পেশ করলাম।
অতএব, মহোদয় সমীপে বিনীত প্রার্থনা আমার উলেখিত তথ্যাবলী বিবেচনা পূর্বক আমাকে উক্ত পদে নিয়োগ দানে আপনার মর্জি হয়।
বিনীত নিবেদক
প্রার্থীর নাম
সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য চিঠি লেখার নিয়ম
এর প্রথম অংশে সংবাদপত্রের সম্পাদক বরাবর একটি দরখাস্ত বা আবেদন পত্র লিখতে হয় । এ মর্মে লিখা হয় যে যাতে করে তার পাঠানো প্রতিবেদনটি সংবাদপত্রে ছাপানো হয় । এই দরখাস্তের পাশাপাশি লিখিত সংবাদপত্রের ভাষায় প্রতিবেদনটি পাঠাতে হয় ।
মানপত্র ও স্মারকলিপি
চিঠিপত্র লেখার নিয়ম মানতে হয় যখন মানপত্র ও স্মারকলিপি লেখা হয় । পত্রের আরো একটি রূপ হলো মানপত্র বা স্মারকলিপি । কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আগমনে তাকে যথোপযুক্ত সম্মান জানাতে স্বাগতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মানপত্র পাঠ করা হয়।
অধিকাংশ মানপত্রের মাধ্যমে আগত অতিথিকে শ্রদ্ধা আর ভালবাসার রসালো অভিব্যক্তি দ্বারা সিক্ত করা হয়। সেইসাথে গুরুত্বপূর্ণ অতিথির কাছে নিজেদের দৈন্য তুলে ধরে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়। তাই মানপত্রটি হতে হয়ে হয় যথেষ্ট মানসম্মত। মানপত্রের ভাষা হতে হবে প্রাঞ্জল। এখানে কোন দুর্বোধ্য শব্দ কিংবা পংক্তি সন্নিবেশ করা মোটেও ঠিক নয়।
মানপত্রের শীর্ষে অতিথির নাম পদবী উল্লেখ করতে হয়। যেমন- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদের সরকারের ...... মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ............ মহোদয়ের শুভাগমন উপলক্ষে মিতালির বন্ধন সমাজকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি / অভিনন্দন
চিঠি লেখার নিয়ম এর মানপত্রের প্রথম অনুচ্ছেদে কিছু ভূমিকাসহ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন দিয়ে অতিথিকে বরণ করা হয়। প্রয়োজনে কোন লেখকের কবিতা বা আবেগময় লেখার উদ্বৃতি তুলে ধরা যায়। এই অনুচ্ছেদটিতে বিভিন্ন শব্দালঙ্কার প্রয়োগ করে আবেগানুভূতি প্রকাশ করা যায়।
সময় বা ঋতু অনুযায়ী কিছু প্রাকৃতিক বর্ণনা তুলে ধরলে লেখাটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। যেমন- ‘‘সারাদেশে এখন সোনাঝরা হেমন্তের গৌরবময় উপস্থিতি। গ্রাম-বাংলার সর্বত্রই নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। চারদিক তাই নবান্ন উৎসবে মুখর। অঘ্রাণের এমনি এক মায়াবী লগ্নে আমরা যখন কাঙ্ক্ষিত প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার একান্ত বাসনায় অপেক্ষার প্রহর গুণছিলাম; ঠিক তখনি এক অনাবিল আনন্দের ঊর্মীদোলায় আমাদের আন্দোলিত করে এ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে আপনার শুভাগমন। আপনার আগমনে বনে বনে যেন আজ পুষ্পের বাহুল্য; সেই সাথে ভ্রমরের গুঞ্জনধ্বনি যেন আপনার আগমন উল্লাসেই মুখর। আপনাকে কাছে পেয়ে আমরা আজ ধন্য। আপনি আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
মানপত্র লেখার নিয়ম এর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদেও কথার ফুলঝুরিতে অতিথির গুণকীর্তন করে তাকে আরও সিক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যদি অতিথির দ্বারা এলাকার বা দেশের উল্লেখ্যযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে তবে সে সম্পর্কে ইতিবাচক আলোচনা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ থাকতে পারে এই অনুচ্ছেদে।
মানপত্র লেখার নিয়ম এর তৃতীয় অনুচ্ছেদে স্বাগতিক প্রতিষ্ঠান বা এলাকার বিভিন্ন দৈন্যের কথা বা সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রতিকারের জন্য দাবি বা অনুরোধ জানানো যেতে পারে।
মানপত্র লেখার নিয়ম এর চতুর্থ অনুচ্ছেদে অতিথিকে কষ্ট স্বীকার করে এখানে আসায় তার মহানুভবতা নিয়ে কিছু বলা যায়, যেমন- ‘‘শত ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে আপনি আমাদের মাঝে এসে যে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি এভাবেই বার বার যেন আপনি আমাদের মাঝে এসে আমাদের ধন্য করেন। ’’
উপসংহারে অতিথির জীবনের সুস্থতা ও দীর্ঘজীবনের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা। যেমন- ‘‘সৃষ্টিকর্তার কাছের আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আপনাকে সুস্থ, সবল, দীর্ঘ জীবন দান করেন। ’
অফিসিয়াল চিঠি লিখছেন একজন মানুষ |
আমন্ত্রণ বা নিম্নত্রণ পত্র লিখার নিয়ম
চিঠি লেখার নিয়মের মধ্যে পড়ে যায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নানা প্রয়োজনে আমাদেরকে আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ বা সমাবেশের আয়োজন করতে হয়।
বিয়ে, জন্মদিন বা দিবস উদযাপন,সাংস্কৃতিক বা ক্রীড়া উপলক্ষে নির্ধারিত কর্মসূচির আলোকে যে পত্র লেখা হয় তাকে আমন্ত্রণপত্র বা নিমন্ত্রণপত্র বলে ।
সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই তা ছাপিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু –বান্ধব ও ঘনিষ্ঠ লোকজনের মাঝে বিলি করতে হয় ।
আমন্ত্রণপত্র বা নিমন্ত্রণপত্র বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । যেমন বিয়ে, জন্মদিন, কুলখানি, রবীন্দ্র – নজরুল জয়ন্তী , স্বাধীনতা দিবস , একুশে ফেব্রুয়ারী ,বার্ষিক ক্রীড়া, পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণ, সাহিত্য সভা, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ,শিক্ষাসপ্তাহ, বইমেলা, শোকসভা, নাগরিক সংবর্ধনা,সুবর্ণজয়ন্তী, নাট্য- উৎসব,লোক–উৎসব,সাংস্কৃতিক উৎসব ইত্যাদি নানা উপলক্ষে।
নিমন্ত্রণপত্র রচনার বৈশিষ্ট্য
নিমন্ত্রণপত্রের বিভিন্ন অংশ
১. সম্ভাষণ:
২.মূল পত্রাংশ:
৩. ইতি বা সমাপ্ত :
৪. নাম- স্বাক্ষরে সৌজন্য:
৫. ঠিকানাও তারিখ :
৬. অনুষ্ঠানসূচি :
৭. পত্র- প্রাপকের ঠিকানা:
এসকল নিয়মগুলো হলো চিঠি লেখার নিয়ম । চিঠি লেখার নিয়ম মেনে চিঠি পত্র লেখাটি হলো উত্তম । যদি চিঠি লেখার নিয়ম না মেনে কোনো পত্র বা চিঠি লেখা হয় তাহলে তা চিঠির সৌন্দর্য কমিয়ে দেয় । তাই চিঠি লেখার নিয়ম মেনে চলতে হয় ।