মিনিমালিজম ও মিনিমালিস্ট |
যে কোন সামর্থ্যবান নারী/পুরুষ যখন মনকে তৃপ্ত রেখে বাহুল্য পরিহার করে মিতব্যয়ীতার সাথে শুধুমাত্র একান্ত প্রয়োজনীয় বৈশ্বিক সামগ্রী ব্যবহার করে জীবনকে জঞ্জালমুক্ত রেখে সময় ও অর্থ বাঁচিয়ে পারিবারিক জীবন, ধর্মীয় কার্যক্রম ও নিজের আত্মোন্নয়নে বেঁচে যাওয়া বর্ধিত অর্থ ও সময় ব্যয় করাকে "মিনিমালিজম" বলা যায় এবং তা অনুসরণকারী নারী/পুরুষদের "মিনিমালিস্ট" আখ্যা দেয়া যায়।
মিনিমালিস্টরা অনেক বেশি উদার মনের। তারা বাড়তি দ্রব্য লাগাতার ডোনেট করে ফলে মনটা উদার থাকে। তারা বস্তুর পিছে সময় ব্যয় করে না কারণ বস্তু তেমন নাই। বেশি সময় ব্যয় করতে পারে পরিবারের জন্য, ধর্মের জন্য ও পছন্দের কাজে ফোকাস করার জন্য।
মিতব্যয়িতা আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনের একটা প্রয়োজনীয় উপাদান। অপচয় ও অপব্যয় গুনাহ'র কাজ। মিনিমালিস্টরা প্রয়োজন ছাড়া একটি প্রয়োজনীয় আইটেমের বাইরে দুইটি কিনবে না। বাহুল্য পরিহার করবে ও সংখ্যা সীমিত রাখবে। মিতব্যয়ীরা অর্থের লাগাম টেনে ধরে। আর মিনিমালিস্টরা অর্থের লাগামের পাশাপাশি সংখ্যার লাগাম টানে। আমার দুইটি শার্টে চললে তিনটি নয়। আমার একটি টিভিতে চললে দুইটি নয়। আমার বাসায় গেস্ট আসলে বাচ্চারা রুম শেয়ার করলে আলাদা গেস্ট রুম কেন? আমার বাসার বাইরে দোকানে যদি সব কিছু কেনা যায় বা ভাড়া পাওয়া যায় তবে স্টোর ভর্তি করে মালামাল রাখব কেন? মিনিমালিস্টের সব জিনিস কাজের তাই স্টোর রুমে জমানোর কোন দ্রব্য নাই।
ইউরোপ আমেরিকায় মিনিমালিস্ট জনগোষ্ঠী বাড়ছে। জাপান অনেক আগে থেকেই মিনিমালিস্ট হওয়ার চর্চা করে। হয়ত আমাদের দেশের মধ্যবিত্তরাও সচেতন হবে খরচ সীমিত করায় আর কম প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ করা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য।
কৃপণতা মিনিমালিস্টরা অপছন্দ করে। তারা হয়ত লকার ভর্তি শার্ট রাখবে না। যে কয়টা রাখবে তা হবে বেস্ট কোয়ালিটি। তারা কোয়ানটিটি নয় কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দেয়। তারা জীবনকে সহজ করতে যত খরচই যাক টেকনোলজির সহায়তা নেয়। তারা জীবন সহজ করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ও ডিশ ওয়াশার মেশিন বিলাসীতা নয় প্রয়োজন মনে করে। অথচ টিভি কিনতে আগ্রহী নয়।
মিনিমালিস্টরা জীবনে বিনোদন থেকে পারপাস নিয়ে বেশি কাজ করে। তাই তো এক বাসায় একাধিক টিভি তাদের পছন্দ নয়। অহেতুক দামী ফোন পছন্দ নয়। যতটুকু ভাল কোয়ালিটি হলে গাড়ী চলে ধারকর্জ ছাড়া সে রকম গাড়ীই তাদের পছন্দ লেটেস্ট মডেল নয়। আবহাওয়া খারাপ হলে প্রোডাকটিভিটি বাড়াতে ক্লাইমেট কনট্রোল তারা রাখার অনুমতি দেয়। প্রয়োজন ছাড়া একটি সুতাও তারা রাখবে না। "জাস্ট ইন কেইস আইটেম"ও রাখবে না। তাদের কোন আইটেম নতুন আনলে পুরাতনটি আউট করে যাকে বলে, One in one out ফর্মূলা।
পরিশেষে বলা যায় মিনিমালিস্ট ও মিনিমালিজম কোন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিচারে নিরুপন করতে হবে। এটা পড়াশোনা করে মন দিয়ে অনুভব করার বিষয়। ভাষায় সংজ্ঞায়িত করলে এর মহত্ব ও উপলব্ধি হয়ত বুঝতে ভুল হতে পারে। তাই তো এর মর্ম অনুস্মরণ করে ক্রমাগত এর বিস্তার ঘটছে কারণ বস্তুবাদী জীবন স্বস্তি দিলেও তৃপ্তি ও সুখ দেয় না। মনটা ফাঁকা থাকে। মনটা পরিপূর্ণ করার উপায়ই হল জঞ্জালমুক্ত হালকা জীবন বেছে নিয়ে মিনিমালিস্ট হওয়া।
লিখেছেন - তারেক সরকার , সেনাবাহিনী
ইন্টারনেট হতে সংগৃহিত ।