গহনা |
সে যাই হোক, আমি জটিল বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে বিয়ে-শাদী ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে নারী গয়না দিয়ে সাজবে, এটাই হল সনাতনী রীতি বা ধারা।
এখন এই গয়না পড়াটাকে আধুনিক মিনিমালিস্ট ধারায় চিন্তা করি। নারীর গয়না যদি সব সময় পড়তে না পারে তাহলে গয়না রেখে লাভ কি? সম্পদ হিসাবে লকারে রাখা নাকি আর্থিক নিরাপত্তা।
কিছু ঘটনা বলি, আমার একজন নিকট আত্মীয়াকে ওনার বাবা ও মা বিয়েতে একসেট সোনার গয়না দেন। শশুর বাড়ীর পক্ষও কিছু গয়না দেয়। বিয়ের দুই সপ্তাহ পর এক রাতে ওনার বিয়ের সুটকেস জানালার পাশে রাখা ছিল। চোর বাইরে থেকে কায়দা করে জানালা খুলে সুটকেস খুলে সব সোনার গয়না নিয়ে যায়। তিনি অনেক কষ্ট পেলেন। সে কষ্ট বুকে পুষে দীর্ঘ প্রায় দশ বছর স্কুলে মাস্টারি ও টিউশন করে টাকা বাঁচিয়ে পুনরায় গয়না করেন। অতঃপর একদিন শহরের বাসায় তালা দিয়ে গ্রামে বেড়াতে যান। গ্রাম থেকে এসে দেখেন বাসার তালা ভেঙ্গে ঘরের অনেক জিনিস উধাও। এর মধ্যে যাবতীয় সোনার গয়নাও উধাও।
তখন থেকে তিনি গায়ে পড়া একসেট হালকা সোনার গয়না ব্যতীত আর কখনো গয়না কিনেননি। একসেট সোনার গয়না সব সময় পড়ে থাকেন। উনার ধারনা, যেহেতু সব গয়না পরে আছেন, হাইজাকের ভয় আছে। তবে চুরি বা হারানোর ভয় কম। উনার ভাবখানায় মনে হয় হাইজাক হলেও দুঃখ থাকবে না। কারণ বছরের পর বছর তিনি গয়না পরে আছেন। অথচ তিনি তিন সেট গয়না হারালেন, না পরে, সুটকেসে আর আলমারিতে রেখে। তাইতো ওনার পদ্ধতি সোনার গয়না যা পরে আছেন এর বাইরে কিছু রাখছেন না।
এর পর থেকে তিনি আগামী দিনের নিরাপত্তার জন্য সোনার গয়না না কিনে ঘর বাড়ী করে ভাড়া দেয়া ও সঞ্চয়পত্র কেনাকাটা ইত্যাদি করছেন। সেখান থেকে আয় পাচ্ছেন। তাই বলা যায় সোনার গয়নার বদলে ওগুলো ওনাকে আর্থিক নিরাপত্তা দিচ্ছে।
আর একটা গল্প। এক ব্যবসায়ী স্বামীর কাছে তার স্ত্রী হীরার আংটি গিফট চাইল। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, দিতে পারি এক শর্তে তুমি আংটিটা আলমারিতে না রেখে সব সময় হাতে পড়ে থাকবে। ব্যবসায়ীর পত্নী বলেছিল, "ওমা একি কথা, আমি বিয়ে শাদী বা বিশেষ অনুষ্ঠানে পড়ব। বাকী সময় যত্ন করে রাখব"। উত্তরে ব্যবসায়ী বলেছিল, "আমার সামনে হীরা দিয়ে তোমার আঙ্গুলের সৌন্দর্য প্রদর্শন হবে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বিষয়। সেজন্য তুমি পড়ে থাকবে। হীরার আংটি পড়ে থাকতে থাকতে কাল হয়ে গেলে পালিশ করিয়ে দিব। হীরার কণা খুলে গেলে মেরামত করে দিব। হারিয়ে গেলে দুঃখ থাকবে না কারণ মন পূর্ণ করে ব্যবহার করে নিচ্ছ"।
আমরা আসলে মিলিমালিস্টদের গয়না ব্যবহারের উত্তর পেয়ে গেছি। গয়না কি আলমারিতে রাখার বিষয়? তাই তো আমাদের এমন গয়না থাকবে যা সব সময় পড়া যাবে। কয়েকদিন পরে বোরিং লাগলে ওটা বদলিয়ে নতুন ডিজাইনের গড়িয়ে নিলেই হল। সর্বদা "এক সেট" সব সময় পড়ার জন্য। কেমন হয় মিনিমালিস্ট গয়নার আইডিয়া। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী গয়নার সেট হতে পারে রুপার/গোল্ড প্লেটিং রুপা/ সোনা/ডায়মন্ডের। অনেকে বলবেন, আমার ছেলের স্ত্রী ও মেয়েকে দেয়ার জন্য গয়না গড়াব ও তাদের ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিব। মিনিমালিস্টরা বলবে, দরকার নেই। তাদের জন্য গয়না না কিনে সে টাকা জমান ও বিনিয়োগ করে বাড়ান। বিয়ের আগে ওই টাকা দিয়ে লেটেস্ট ডিজাইনের গয়না তাদের কিনে দিবেন। কি বলেন, সেটা ভাল নয় কি? অন্যথায় আপনার মেয়ে বা পুত্রবধূ আপনার গয়নাকে ব্যাকডেটেড বলবে। তা আপনাকে কষ্ট দিবে। তাই অতবেশী চিন্তা নয় নিজের সময়টুকুরই শুধু দায়িত্ব নিন। সন্তানদের অনাগত দিনের দায়িত্ব নেয়ার জন্য তাদের সক্ষম করে গড়ে তুলুন।
লিখেছেন - তারেক সরকার, সেনাবাহিনি (ইন্টারনেট হতে সংগৃহিত)