ব্র্যান্ডিং |
আপনি কি জানেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড কোনটা? উত্তরটা হলো, নাইকি কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড মানে হচ্ছে, যে ব্র্যান্ডের পন্যকে বাজারে নকল করা হয় কিংবা যে ব্র্যান্ডের নকল পন্য বাজারে ছাড়া হয়। নাইকির নকল জুতা বিশ্বের এমন কোন দেশ নাই যেখানে পাওয়া যায় না। চীনে নাইকির আসল জুতার চাইতে নকল জুতার বিক্রি বেশী হয়।
পৃথিবীতে কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড এর তালিকায় একদম শুরুর দিকে আছে -
Nike, The North Face, Levi's, Tiffany & Co. Polo Ralph Lauren, Disney, Rayban, Gucci, Viagra, Rolex, Adidas, Apple, Burberry ইত্যাদি ইত্যাদি শুভেচ্ছা।
পৃথিবীর সবচাইতে বেশী যে ধরনের পন্য নকল হয়, তার প্রথম ৫ টা জনরা হলো-
১) কাপড়।
২) জুতা
৩) কসমেটিকস
৪) ইলেকট্রিক সামগ্রি
৫) ঘড়ি
(সূত্রঃ msn.com, USAtoday.com)
নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে এর ভেতর ৪ টাই হলো ফ্যাশন একসেসরিজ! বাকীটা বুঝে নিন!
প্রসঙ্গত একটা কথা বলি, অনেকে ব্র্যান্ড পাইরেসিকে কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড এর সাথে গুলিয়ে ফেলেন। দুইটা প্রায় একই হলেও মোটা দাগে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। কয়েক বছর আগে ইউনিলিভার বিডির রিজিওনাল মার্কেটিং ম্যানেজার পদে নিয়োগদানের সময় মৌখিক পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি ছিলো, কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড আর ব্র্যান্ড পাইরেসির মধ্যে পার্থক্য কি? আমি বাজী রেখে বলতে পারি অনেক নামকরা মার্কেটারও এর উত্তর জানেন না।
১) কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ডঃ যে ব্র্যান্ডের ভিজুয়াল ব্র্যান্ডিং (লোগো, থিম, কালার, মোড়ক সবকিছু) হুবহু ঠিক রেখে হুবহু একই ধরনের নকল পন্য বাজারে আনা হয়। ক্রেতা সেটাকে আসল ব্র্যান্ডের পণ্য মনে করেই কেনে ঠকে। আবার অনেক সময় লোকে ইচ্ছে করেই এসব নকল পন্য কেনে সস্তার লোভে।
এই ধরনের পণ্যে পৃথিবীর সব দেশের চোরাই বাজারই ঠাসা থাকে। আমরা যেটাকে অনেক সময় “কপি” বলে থাকি। যেমনঃ পুরান ঢাকা বা ধোলাইখালে গেলে গেলে বুঝবেন কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড কি জিনিস!.
কসমেটিকস থেকে শুরু করে গাড়ীর পার্টস - সব পাবেন। কিন্তু সিংহভাগই নকল। সেটা যে নকল, ভালো করে খতিয়ে না দেখলে বা সাথে এক্সপার্ট লোক না নিয়ে গেলে ঠকতে হবে নির্ঘাত। অনেক সময় পন্য কেনার আগে বা ব্যবহার করার আগে বুঝাই যায় না এটা নকল পন্য।
এটি অত্যন্ত সুলভ জিনিস, হয়তো প্রতিদিনই আপনি বেশ কয়েকবার কয়েক শত কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড এর দেখা পাবেন রাস্তা ঘাটে। এ ধরনের নকল পন্য কখনই মেইনস্ট্রিমে আসে না। কারণ এসব পণ্যের আদি ও আসল জায়গা হচ্ছে চোরাই মার্কেট, বা ফুটপাথের হকার।
২) ব্র্যান্ড পাইরেসিঃ কোন ব্র্যান্ডকে হুবহু নকল না করে সেটার খুব কাছাকাছি কোন ভিজুয়াল ব্র্যান্ডিং করে, অরিজিনাল লোগোর দুয়েকটা অক্ষরকে একটু এদিক-সেদিক করে কোন নকল পন্য বাজারজাত করাকে এক কথায় বলে ব্র্যান্ড পাইরেসি!
ব্র্যান্ড পাইরেসি তুলনামূলক দুর্লভ জিনিস, আপনি প্রতিদিন দেখতে পাবেন না। হঠাৎ হঠাৎ আপনার চোখে পড়বে, তাও যদি আপনি খুব ভালো করে খেয়াল করেন শুধু তখনই।
মজার ব্যাপার হলো, অন্যের ব্র্যান্ড পাইরেসি করে বাজারজাত করা এমন অনেক পন্যই আপনি মেইনস্ট্রিম বাজারেও পাবেন, নামি দামি শপিং মলেও পাবেন। এমনকি, অনেক সময় এরা কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে ব্র্যান্ড পাইরেসির মার্কেটিংও করে থাকে।
যেমনঃ কিছুদিন আগে হারপিকের মত দেখতে একটা টয়লেট ক্লিনারের এড দেখলাম পত্রিকায়। একটু পর ভালো করে খেয়াল করে দেখি, লোগোটা খানিকটা ভিন্ন, কিন্তু প্রথম দেখায় যে কেউ ভাববে এটা হারপিকের লোগো।
আর ব্র্যান্ড পাইরেসির মূল ধোঁকাটা এখানেই, টার্গেট অডিয়েন্সকে কনফিউজড করে দেয়া।
ব্র্যান্ড পাইরেসি করা হয় সাধারনত দুটি কারণে-
ক. কম খরচে ও কম সময়ে কোন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের মার্কেট শেয়ার ধরতে।
খ. আইনী ঝামেলা এড়াতে। (হুবহু নকল করা হয় না বলে অরিজিনাল ব্র্যান্ড মামলা করতে পারে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে করা যায়, পেটেন্ট বা কপিরাইট উকিলরা ভালো বলতে পারবেন।)
দ্রুত মুনাফা করতে চাইলেও কিন্তু আখেরে খুব একটা ফায়দা হয় না। শর্ট রানে মুনাফা করলেও ইন দ্য লং রান এইসব পাইরেটেড ব্র্যান্ড বাজারে খুব বেশীদিন টিকে থাকতে পারে না। বা টিকে থাকলেও একেবারে নীশ মার্কেটে টিকে থাকে, যেমনঃ অজপাড়াগায়ে।
এই কারনে আপনি শহরের চাইতে গ্রামাঞ্চলে পাইরেটেড ব্র্যান্ডের দেখা পাবেন বেশী। তাছাড়া শহরের কাস্টমার তুলনামূলক বেশী স্মার্ট বলে তাদেরকে খুব বেশীদিন ধোঁকা দিয়ে রাখা যায় না। ব্র্যান্ড পাইরেটরা কি জানে না যে, মানুষজন বেশিদিন কনফিউজড থাকতে পছন্দ করে না?
আমার কথা হলো, আমি সব কিছুই যেহেতু করছি, মার্কেটিং - ব্র্যান্ডিং - ডিসট্রিবিউটিং সবই তো করছি পয়সা খরচ করে, তাইলে কেন আমি পাইরেটেড ব্র্যান্ডিং করে নিজের অর্থ ও সুনাম উভয়ই খুয়াবো? কিন্তু আফসোস, তারা Make it Or Fake It নীতিতে বিশ্বাস করে। নতুন কিছু বানাতে না পারলে নকলই তো ভরসা।
ব্র্যান্ড পাইরেসি অনেক বিশাল একটা সাবজেক্ট, মাল্টি মিলিয়ন ডলার (ইফ নট বিলিয়ন ডলার) ইন্ডাসট্রি, শুধু এই টপিকে অনেক অনেক গবেষণা হয়েছে, থিসিস পেপার পাবলিশ হয়েছে। নেটে ঘাটঁলে আপনি হাজার হাজার কেইস স্টাডি পাবেন এর উপরে। ”ক্রিয়েটিভ ব্র্যান্ড পাইরেসি” লিখে সার্চ দিলে দেখবেন মানুষজন কি পরিমান পয়সাকড়ি আর বুদ্ধিমত্তা খরচ করে শুধুমাত্র অন্যের ব্র্যান্ডকে পাইরেট করতে!
আমি সবচেয়ে বেশী কোকাকোলার ব্র্যান্ডকে পাইরেসির শিকার হতে দেখেছি। ইউনিতে পড়ার সময় একবার আমাদের প্রফেসর ক্লাসে কোকাকোলার দুইটা লোগোর ছবি পাশাপাশি রেখে বলতে বল্লেন কোনটা পাইরেটেড। আমাদের কালোঘাম ছুটে গেসিলো বের করতে! এতটাই আইডেন্টিকাল ছিলো নকল লোগোটা।
আনলাইক কাউন্টারফিটেড ব্র্যান্ড-প্রডাক্ট, ব্র্যান্ড পাইরেসি বুঝতে সেই পন্য কেনা বা ব্যবহার করার কোন দারকার নাই, স্রেফ আপনার তীক্ষ দৃষ্টি আর কমন সেন্সই যথেষ্ঠ। ব্র্যান্ড পাইরেসির কয়েকটা উদাহরণ কমেন্টের ঘরে দিলাম, সেটা দেখলে সহজেই বুঝতে পারবেন ব্র্যান্ড পাইরেসি কি বস্তু।
লিখেছেন - প্রলয় হাসান