টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং |
"God makes us Human, And We make them Gentleman." স্যারের এই কথাটা টেক্সটাইলের প্রতি এক আলাদা অনুভূতি তৈরি করে। সভ্য মানুষের কথা চিন্তা করার সময় আমরা নিশ্চয়ই কোনো উলঙ্গ মানুষের কথা চিন্তা করি না, বরং পোশাক ছাড়া আমরা কোনো সভ্য মানুষের কথা চিন্তাই করতে পারি না। আর এই পোশাকটা টেক্সটাইলেরই একটা প্রোডাক্ট। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ।
আপনি ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ছাড়া হয়তো সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারবেন, ইন্টারনেট ছাড়াও, হয়তো বিদ্যুৎবিহীন একটি দিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে, কিন্তু কোনোরকম পোশাক ছাড়া কী আপনি নিজেকে একদিনের জন্যও বা এক মুহূর্তের জন্যও ঘরের বাইরে কল্পনা করতে পারেন?!!
এখানেই টেক্সটাইলের গুরুত্ব, And this is how Textile make its uniqueness from other Engineering. And it is also true that without technology we can't imagine textile industries in a broad sense.
এখনো কোনো সাধারণ মানুষকে টেক্সটাইল নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা শুধুমাত্র পোশাক বা গার্মেন্টস ছাড়া আর কোনো কিছুর সাথে টেক্সটাইলকে খুব একটা রিলেট করতে পারে না। কিন্তু টেক্সটাইল ফিল্ডটা যে কতটা সম্প্রসারিত আর এর বিশালতা যে কতটুকু এটা শুধুমাত্র টেক্সটাইল নিয়ে পড়াশোনা করা মানুষরাই ভালোমতো জানে। আর আমি সাধারণ মানুষের মাঝে টেক্সটাইল নিয়ে এই চিন্তাধারাটার পরিবর্তন আনতে চাই, এখনো নিজের সাধ্যমতো কাছের মানুষদের কাছে টেক্সটাইলের বিশালতা তুলে ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।
টেকনোলজি বা মেডিকেল সাইন্স যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শিল্প বিপ্লব হচ্ছে, বিভিন্ন যুগে। এ দুটো থেকে আপনি টেক্সটাইলকে আলাদা করে দেখতে পারবেন না।
বলা যায় টেক্সটাইলের কোর এলিমেনস মনোমার, পলিমার থেকেই শুরু। এরপর ফাইবার, ইয়ার্ন, ফ্যাব্রিক আর টেক্সটাইল প্রোডাক্ট। সুতরাং যেখানেই অরগানিক বা ইনঅরগানিক সূক্ষ্ম পলিমার বা ফাইবারের ব্যাবহার আছে সেখানেই টেক্সটাইলের অবদান আছে।
এবার ভাবুন এর বিশালতা নিয়ে। আপনি গরমকালে যে মাদুরে শোন সেখান থেকে শুরু করে মহাকাশে যাওয়া যানটাতেও টেক্সটাইলের ব্যাবহার আছে।
কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে আমরা এখনো রিসার্চ বেইজড টেক্সটাইল থেকে অনেক দূরে আছি, শুধুমাত্র RMG সেক্টরের প্রসারতা নিয়ে চিন্তা করছি, এ খাত থেকে কীভাবে জিডিপি-তে আরো বেশি অবদান রাখা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করছি, এক্সপোর্টের মাধ্যমে কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের হার বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে ভাবছি, অথচ RMG উৎপাদনের জন্য যে Raw materials গুলো আমরা ব্যাবহার করি তার জন্য এখনো আমাদের বিদেশীদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়, মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার চলে যায় এগুলো আমদানিতে।
কিন্তু টেক্সটাইল শিল্পের ইনোভেশন, ট্রান্সফরমেশন, রিসার্চ বেইজড ইন্ডাস্ট্রি এসবের দিকে আমাদের আগ্রহ খুব কম। আমরা মনে করি এক একটা রিসার্চের পেছনে, নতুন কোনো কিছু আবিষ্কারের জন্য অনেক অর্থ আর সময় অপচয় হয়, আর সেই অর্থ আর সময় দিয়ে আমরা প্রডাকশন করেই RMG থেকে অনেক আয় করতে পারবো। কিন্তু অন্যের ধার করা জিনিস দিয়ে কোনো কিছু বানিয়ে সেটা বিক্রি করার চেয়ে, নিজেরা রিসার্চ করে, নতুন কোনো আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে নিজেদের তুলে ধরাটা অনেক বেশি সম্মানের। এরপর হয়তো বিদেশিরাই আমাদের উপর নির্ভরশীল হবে সেই প্রডাক্টটির জন্য যেটা আমরা ইনোভেইট করেছি, সাসটেইনেবল আর ইকোনোমি এন্ড ইউজ ফ্রেন্ডলি করেছি।
বাংলাদেশে টেক্সটাইলের এখনো অনেক সম্ভাবনা আছে, দরকার কিছু স্বপ্নবান মানুষের, যারা শুধু স্বপ্নই দেখে না, সেটার জন্য যথেষ্ট শ্রম আর সাধনা দেয়, বিলিয়ে দেয় সর্বোচ্চটুকু। শুধুমাত্র দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য না বরং টেক্সটাইল শিল্পের মাধ্যমে মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখে, মানুষের কল্যাণের জন্য, পৃথিবীটাকে আরো সুন্দর করার জন্য।
টেক্সটাইল ছাড়া মানুষের জীবনের সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে কোমলতা, কনকনে শীতে উষ্ণতা, হারিয়ে যাবে সভ্যতা। হারিয়ে যাবে একটি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। অন্যের সামনে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের স্বাভাবিক প্রবণতা।
জন্মের শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে শিল্পটি মানুষের সঙ্গী হয় নিশ্চয় সেটা শুধুমাত্র নিছক কোনো শিল্প না। এর মাঝে অনেক সম্ভাবনা, নতুনত্ব, আবিষ্কার প্রেরণাও লুকিয়ে আছে।
লিখেছেন - Kasfiha Khandaker
B.Sc in Textile Engineering
Dhaka University (Technology Unit)