Featured

PhilosophySubjectUndergraduate

নির্বিচারবাদ, সংশয়বাদ, বিচারবাদ, দ্বান্ধিক পদ্ধতি ও স্বজ্ঞাবাদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা

, মে ২৪, ২০২২ WAT
Last Updated 2022-09-15T16:15:08Z
দর্শন ১ম বর্ষ দর্শনের সমস্যাবলি


দর্শন - ফিলোসফি ১ম বর্ষ। বিষয়: দর্শনের সমস্যাবলি।

দার্শনিক আলোচনার পদ্ধতিগুলো কী কী ? আলোচনা কর। যথার্থ দার্শনিক পদ্ধতি কী?

দার্শনিক আলোচনার পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-

১. নির্বিচারবাদ

২.সংশয়বাদ

৩. বিচারবাদ

৪.দ্বান্ধিক পদ্ধতি

৪. স্বজ্ঞাবাদ



১. নির্বিচারবাদ কী:


আমাদের পক্ষে জ্ঞান লাভ সম্ভব কিনা, কতটুকু জানা সম্ভব বা জ্ঞান কিভাবে জানতে পারি তা কোনরূপ বিচার না করেই যে পদ্ধতিতে দার্শনিক আলোচনা করা হয় তাকে নির্বিচারবাদ বলে।

নির্বিচারবাদে কতগুলো নীতি বা সত্যকে স্বত:প্রমাণিত বলে মনে করে এবং সেগুলো থেকে অন্যান্য সিদ্ধান্ত অনুমান করে। প্রাচীন দার্শনিক প্লেটো এবং আধুনিক দার্শনিক দেকার্ত জ্ঞানের জন্য পূর্বত:সিদ্ধ জ্ঞানকে সত্য বলে মেনে নেন।

আধুনিক দর্শনে বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ নির্বিচারবাদী মতবাদ।


দেকার্ত, স্পিনোজা, লাইবনিজ প্রমুখ বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ  বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই দাবি করেন যে, কতগুলো স্বত:সিদ্ধ ধারণা বা নীতি থেকে অবরোহ পদ্ধতিতে জ্ঞান লাভ করা যায়।

আবার বেকন, লক, বার্কলি, হিউম প্রমুখ অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই অভিজ্ঞতা বা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণকে জ্ঞানলাভের একমাত্র মাধ্যম বলে দাবি করেন।



২.  সংশয়বাদ কী:


সংশয়বাদ অনুসারে কোনরূপ নিশ্চিত জ্ঞান সম্ভব নয়। এ মতানুসারে  এমন কোন দার্শনিক মতবাদ নেই যা সকলের কাছে, সকল সময়ে এবং সকল দেশে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে।


প্রাচীন গ্রীসে সোফিস্ট সংশয়বাদী দার্শনিকের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন প্রোটোগোরাস। সংশয়বাদ নিয়ে তার মূলসূত্র হলো- “মানুসই সবকিছুর মাপকাঠি।” একজনের কাছে যা সত্য অন্যের কাছে তা মিথ্যা হতে পারে।


আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য সংশয়বাদী দার্শনিক ডেভিড হিউম। হিউমের মতে, আমাদের জ্ঞান সংবেদনেই সীমাবদ্ধ। যার সংবেদন পাইনা, তার সম্পর্কে কোন জ্ঞান লাভ করতে পারিনা। এজন্য হিউম স্রষ্টা, দ্রব্য ও মনের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন।



৩. বিচারবাদ কি:


নির্বিচারবাদ এবং সংশয়বাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ইমানুয়েল কান্ট বিচারবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। কান্টের মতে, অভিজ্ঞতা বা বুদ্ধি কোনটাই এককভাবে কোন জ্ঞান দিতে পারেনা।জ্ঞানের দুটো দিক আছে। একটি হচ্ছে জ্ঞানের বিষয় বা উপাদান এবং অপরটি হচ্ছে জ্ঞানের আকার। আমরা সংবেদন বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞানের উপাদান পাই এবং বুদ্ধি দেয় জ্ঞানের আকার।


কান্টের মতে, আমাদের জ্ঞান দৃশ্যমান জগতেই সীমাবদ্ধ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগত, আসল জগতের অবভাস মাত্র। সুতরাং, বস্তুর অবভাসকেই জানা যায়, বস্তুর যথার্থ স্বরূপকে জানা যায়না।



৪. দ্বান্ধিক পদ্ধতি:


দুটি পরস্পরবিরোধী মতবাদের মধ্যে অগ্রসর হয়ে দ্বান্ধিক পদ্ধতি সত্যকে পেতে চায়। এ পদ্ধতির দুটি রূপ আছে-

১. নেতিবাচক দ্বান্ধিক পদ্ধতি

২. ইতিবাচক দ্বান্ধিক পদ্ধতি


নেতিবাচক দ্বান্ধিক পদ্ধতি:


সক্রেটিস প্রথমে তার প্রতিপক্ষ সোফিস্টদের মতামত প্রকাশ করার জন্য আহবান করতেন। তারপর তিনি কথোপকথনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মতের অসঙ্গতি ও ভুল তুলে ধরতেন। ফলে পরোক্ষভাবে তার নিজের মতই প্রতিষ্ঠিত হত। এ পদ্ধতি ‘সক্রেটিস পদ্ধতি’ নামে পরিচিত।



ইতিবাচক  দ্বান্ধিক পদ্ধতি:


হেগেল এ পদ্ধতিতে পরস্পরবিরোধী মত বা ধারণাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। এ পদ্ধতিতে প্রথমে থাকে সদর্থক ধারণা (বাদ) তারপর আসে এটার বিরুদ্ধ নঞর্থক ধারণা (প্রতিবাদ) এবং তারপর উভয়ের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় তৃতীয় ধারণা (সম্বাদ)। সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত তৃতীয় ধারণাকে আবার প্রথম ধারণা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এভাবে এ পদ্ধতি অগ্রসর হতে থাকে।



৫.  স্বজ্ঞাবাদ কি: 


স্বজ্ঞাবাদী দার্শনিক হেনরি বার্গসোঁর মতে, পরম তত্ত্ব বা সত্যের জ্ঞান কেবল স্বজ্ঞার ( অতিন্দ্রীয় অনুভুতি) সাহায্যে জানা যায়, বুদ্ধির সাহায্যে নয়। তার মতে, পরম তত্ত্ব হল গতিশীল, প্রাণ প্রবাহ যাকে কেবলমাত্র স্বজ্ঞা দ্বারা সরাসরি জানা যায়।


শেষকথা:


বুদ্ধি, বিচার ও বিশ্লেষণই যথার্থ দার্শনিক পদ্ধতি। জীবন ও জগতের ব্যাখ্যা ও মূল্য অবধারণ করাই দার্শনিকের কাজ। এর জন্য তাঁকে অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধির উপর নির্ভর করতে হয়। দার্শনিক আলোচনার পদ্ধতিতে স্বজ্ঞারও স্থান আছে। স্বজ্ঞা যদি অন্তদৃষ্টি বুঝায় তবে বুদ্ধির সঙ্গে স্বজ্ঞার কোন বিরোধ নেই। 


মো: মীর হোসেন মজুমদার

প্রভাষক, দর্শন বিভাগ

ফেনী সরকারি কলেজ

(সংগৃহীত)